HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 05_QUESTIONS 12~15
2019.06.20 11:38
প্রভুর দিন ৫ হাইডেলবার্গ প্রশ্নোত্তর ১২। প্রশ্ন: যেহেতু আমরা ঈশ্বরের ধার্মিক বিচারেরর দ্বারা পার্থিব ও অনন্তকালীন
শাস্তি পাবার যোগ্য, তা হলে, এমন কোনো পথ নেই কি, যার দ্বারা আমরা সেই শাস্তি
এড়াতে পারি এবং পুনরায় ঈশ্বরের সুনজর ভোগ করতে পারি? উত্তর: ঈশ্বর তাঁর ন্যায়বিচার পূর্ণ করবেন; তাই, নিজেদের দ্বারা
হোক কিংবা অন্য কারোর দ্বারা হোক, আমাদেরকে একইভাবে তা পূর্ণমাত্রায় সাধন করতে হবে। ১৩। প্রশ্ন: কিন্তু আমরা নিজেরা কি ঈশ্বরের এই ন্যায়বিচার পূর্ণমাত্রায় সাধন করতে পারি? উত্তর: কোনোভাবেই না, বরং এর বিপরীতে, আমরা প্রতিদিন আমাদের
পাপের ঋণ বৃদ্ধি করে চলেছি। ১৪। প্রশ্ন: কোথাও কি এমন কোনো সামান্য সৃষ্ট-জীব আছে, যে আমাদের
জন্য ঈশ্বরের ন্যায়বিচার পূর্ণমাত্রায় সাধন করতে পারে? উত্তর: কিছুই নেই; যেহেতু প্রথমত, মানুষ যে পাপ করেছে, তার জন্য ঈশ্বর
অন্য কোনো সৃষ্ট জীবকে শাস্তি দেবেন না; এবং দ্বিতীয়ত, কোনো সৃষ্ট জীবই পাপের
বিরুদ্ধে ঈশ্বরের অনন্ত (অসীম) ক্রোধের ভার বহন করতে পারে না এবং তা থেকে অন্যদের
উদ্ধার করতে পারে না। ১৫। প্রশ্ন: তা হলে, আমাদেরকে কী ধরণের মধ্যস্থ ও উদ্ধারকর্তার খোঁজ করতে
হবে? উত্তর: এমন ব্যক্তি, যিনি
সত্য ও ধার্মিক মানুষ, তবুও সমস্ত সৃষ্ট জীব অপেক্ষা অধিক ক্ষমতার অধিকারী; অর্থাৎ, যিনি
আবার সত্য ঈশ্বর। শাস্ত্রপাঠ: লেবীয় ৪; মথি ২৫; ইব্রীয়
১০ আমরা, স্বভাবত, ঈশ্বরকে কেবল উত্তম ও করুণাময় বলে
চিন্তা করতে ভালোবাসি। আমরা চাই, তিনি যেন এমন ঈশ্বর হন, যিনি আমাদের পাপকে কিছু বলেন না, ছেড়ে দেন,
তার জন্য কোনো ন্যায়বিচার আকাঙ্ক্ষা করেন না। আজকের দিনে অনেকেই ঈশ্বর সম্বন্ধে
এই ধারণার অধিকারী। কিন্তু তারা কেবল নিজেদের প্রতারিত করে চলেছে। তারা যখন ঈশ্বরকে
এইভাবে চিন্তা করে, তখন তার দ্বারা তারা তাদের মনে মনে মিথ্যা ঈশ্বর, তথা প্রতিমাকে
তৈরি করে থাকে। কারণ, ঈশ্বর হলেন, পবিত্র ও ধার্মিক, তিনি কখনও তাঁর
ন্যায়বিচারেরর সঙ্গে আপোষ করবেন না। তিনি এমন কথা বলেন, “আমি দুষ্টকে
নির্দোষ করব না” (যাত্রা ২৩:৭)। প্রেরিতশিষ্য যোহন যেমন আমাদের বলেছেন, “ঈশ্বর
জ্যোতি, এবং তাঁর মধ্যে অন্ধকারের লেশমাত্র নেই” (১যোহন ১:৫)। জ্যোতি বা আলো হল, ঈশ্বরের চরম ন্যায়বিচার ও সত্যের স্বাভাবিক
প্রতীক, যেমন অন্ধকার হল, শয়তানের ভ্রান্তি ও মন্দতার রাজ্যের প্রতীক। ঈশ্বর
আলো হওয়ায়, এক মুহূর্তের জন্যও এই কথা চিন্তা করা খুবই বোকার কাজ যে, ঈশ্বর পাপকে
হালকাভাবে নিতে পারেন। পরিবর্তে, সত্য হল, একটি পাপও, আমরা যদিও তাকে ‘খুবই
সামান্য পাপ’ জ্ঞান করতে পারি, পূর্ণ শাস্তি ছাড়া মুক্ত হবে না। ঈশ্বরের পবিত্র বাক্যে, দুটি বিষয়ে অন্য কোনো শেষকথায়
উপনীত হওয়া সম্ভব নয়। প্রথমত, শাস্ত্র খুবই পরিষ্কারভাবে বলে যে, কিছু সংখ্যক
মানুষ অনন্তকালের জন্য শাস্তি পাবে। আমরা এ বিষয়ে জোর দিয়ে থাকি, কারণ এই নয় যে,
আমরা এ কথা বলতে ভালোবাসি, কিন্তু কারণ আমরা যদি প্রভু যীশুকে বিশ্বাস করি, তা
হলে এই সত্যকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। কারণ, যীশু নিজে এ বিষয়ে মারাত্মক
বাস্তবকে আমাদের কাছে প্রকাশ করেছেন। (আমরা যখন মথি লিখিত সুসমাচার পাঠ করি, তখন
আমরা বারংবার যীশুকে অনন্ত বিনষ্টতার কথা বলতে শুনি। উদাহরণ হিসাবে আমরা মথি ২৫
অধ্যায় পাঠ করতে পারি।) দ্বিতীয়ত, ঈশ্বর যে প্রত্যেক পাপকে পূর্ণ মাত্রায় শাস্তি
দেবেন, তা আমরা যে বিষয়ের মধ্যে পরিষ্কারভাবে দেখতে পাই, তা হল, যীশুর
দুঃখভোগ ও মৃত্যু। যদিও যীশু নিজে অনন্তকালের জন্য পাপ ও অপরাধ থেকে
সম্পূর্ণভাবে মুক্ত ছিলেন, তবুও তাঁকে তাঁর প্রজাদের পাপ থেকে মুক্ত করতে মরতে
হয়েছিল। পাপের প্রতি কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে, ছেড়ে দেওয়া ঈশ্বরের পক্ষে যদি
সম্ভব হত, তা হলে, এমন মারাত্মক দুঃখভোগ থেকে যীশুকে অব্যাহতি দিতে, তিনি তা
করতেন। কিন্তু বাইবেল আমাদের বলে, “তিনি নিজ পুত্রের প্রতি মমতা করলেন না” (“তিনি
নিজ পুত্রকে পর্যন্ত অবাহতি দিলেন না”) (রোমীয় ৮:৩২)। বিশ্বাসীদের পাপকে
পর্যন্ত যদি যীশু খ্রীস্টেতে শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে, তা হলে, অবিশ্বাসীরা এই
শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারে, এই চিন্ত খুবই বোকার কাজ। এর থেকে আমরা যে কথা বলতে পারি, তা হল, আমরা যেহেতু পাপী, সেইহেতু
আমাদের কাছে কেবল দুটি পথ খোলা আছে। হয়, আমাদের নিজেদেরকে ঈশ্বরের
ন্যায়বিচার সাধন বা পূর্ণ করতে হবে, নয় অন্য কাউকে আমাদের জন্য তা করতে হবে।
এ ছাড়া তৃতীয় কোনো পথ নেই। আদিপুস্তক থেকে প্রকাশিতবাক্য পর্যন্ত, বাইবেলে কোনো
বিষয় যদি পরিষ্কার হয়ে থাকে, তা হল, আমরা নিজেরা কখনও ঈশ্বরের চরম ন্যায়বিচার
পূর্ণ করতে পারি না। উদাহরণ হিসাবে, ধরুন, আমি এমন অসীম পরিমাণ অর্থ ধার করেছি যে, সর্বাধুনিক কম্প্যুটর পর্যন্ত তার হিসাব
করতে পারে না। আরও ধরুন, আমি প্রতিদিন ১ লক্ষ টাকা করে ১০ লক্ষ বৎসর ধরে শোধ
করলাম। আমরা কি উপলব্ধি করতে পারছি, তবুও আমি আমার ঋণের প্রথম দিনে যে পরিস্থিতিতে
ছিলাম, সেখানেই আছি? কারণ হল, সীমাহীন ঋণ কখনও সীমিত অর্থের দ্বারা শোধ করা সম্ভব
নয়। ঠিক একইভাবে, আমরা আমাদের পাপের দ্বারা ঈশ্বরের কাছে ঋণী। আমরা অসীম ঈশ্বরের
বিরুদ্ধে পাপের ঋণ করেছি, আর সীমাবদ্ধ সৃষ্ট জীব হিসাবে আমাদের কোনও দুঃখভোগই তা
শোধ করতে পারে না। কিন্তু ধরুন, একজনের একটি ষাড় বা একটি মেষ আছে, আর
তিনি নিজের পরিবর্তে সেই পশুকে দুঃখভোগ করতে দিলেন। তা কি কখনও ঈশ্বরের
ন্যায়বিচার পূর্ণ করতে পারবে? তা কি “জগতের বিচারের মানে” যথেষ্ট? এর উত্তরও, না। যদিও
ঈশ্বর নিজে পশুবলি উৎসর্গ করতে বলেছিলেন, তবুও তা কখনও মানুষের পাপের জন্য যথেষ্ট
ছিল না। শাস্ত্র আমাদের বলে, “বৃষ বা ছাগের রক্ত যে পাপ হরণ করবে, এটা
হতে পারে না” (ইব্রীয় ১০:৪)। এর কারণ খুবই সহজ: পশুরা কখনও মানুষের
প্রকৃতি বা মূল্যের সমতুল্য হতে পারে না। একই কারণে, স্বর্গদূতরা
পর্যন্ত মানুষকে তার পাপ থেকে মুক্ত করতে পারে না, যেহেতু তারা ঈশ্বরের
প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট হয়নি, সেইহেতু তারা মানুষের সমতুল্য হতে পারে না। তাই বাইবেল
আমাদের বলে, যীশুকে কেন সত্য মানুষ হতে হয়েছিল: ভালো, সেই সন্তানরা যখন রক্তমাংসের ভাগী, তখন তিনি নিজেও সেইরূপ
তার ভাগী হলেন; যেন মৃত্যু দ্বারা মৃত্যুর কর্তৃত্ববিশিষ্ট ব্যক্তিকে অর্থাৎ
দিয়াবলকে শক্তিহীন করেন, এবং যারা মৃত্যুর ভয়ে যাবজ্জীবন দাসত্বের অধীন ছিল, তাদের
উদ্ধার করেন। কারণ তিনি তো দূতদের সাহায্য করেন না, কিন্তু অব্রাহামের বংশের
সাহায্য করছেন। অতএব সমস্ত বিষয়ে নিজের ভাইদের ন্যায় হওয়া তাঁর উচিত ছিল, যেন তিনি
প্রজাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশে কাজে দয়ালু ও বিশ্বস্ত
মহাযাজক হন। (ইব্রীয় ২:১৪~১৭) আমরা চিন্তা করতে পারি, একজন ধার্মিক যদি অন্য
একজনকে পাপ থেকে মুক্ত করতে মৃত্যুভোগ করেন, তা হলে কী হবে? (যদি সত্যিই কোনো
ধার্মিক ব্যক্তিকে পাওয়া যায় ও তিনি তা করতে ইচ্ছা করেন)। কিন্তু সত্য হল, এমন কোনো
ব্যক্তিকে পাওয়া গেলেও, তিনি কখনও অনেক মানুষকে পাপ থেকে মুক্ত করতে পারেন না,
যদি না তিনি কেবল মানুষ নন, কিন্তু অসীম ব্যক্তিত্বের অধিকারী হন। আর ঈশ্বর ছাড়া অসীম
ব্যক্তিত্বের অধিকারী কেউ নেই। তাই, আমাদের পাপ থেকে মুক্ত হতে, এমন এক
মুক্তিদাতার প্রয়োজন, যিনি একাধারে ঈশ্বর ও মানুষ। আর এই শর্ত পূর্ণ করতে
পারেন, এমন ব্যক্তি, কেবল একজনই আছেন। তিনি হলেন, প্রভু যীশু, যিনি বাইবেলে আমাদের
কাছে ঈশ-মানব পরিত্রাতা হিসাবে প্রকাশিত হয়েছেন। আমাদের প্রশ্নোত্তরের পরবর্তী
অংশে, এ বিষয়ে আমরা আরও পরিষ্কারভাবে দেখব।