HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 07_QUESTIONS 20~23
2019.08.01 12:21
প্রভুর দিন ৭ হাইডেলবার্গ প্রশ্নোত্তর ২০। প্রশ্ন: তা হলে, আদমের মাধ্যমে যারা বিনষ্ট হয়েছিল,
তারা সকলেই কি যীশু খ্রীস্টের দ্বারা রক্ষা পায়? উত্তর: না; কিন্তু যারা সত্য বিশ্বাসের দ্বারা তাঁর সঙ্গে কলমের ন্যায় যুক্ত
হয়েছে ও তাঁর সমস্ত উপকারিতা গ্রহণ করে, কেবল তারাই খ্রীস্টের দ্বারা রক্ষা পায়। ২১। প্রশ্ন: সত্য বিশ্বাস কী? উত্তর: সত্য বিশ্বাস কেবল সেই নিশ্চিত জ্ঞান নয়, যার দ্বারা ঈশ্বর তাঁর বাক্যে
যে সমস্ত সত্য প্রকাশ করেছেন, তাদের আমরা ধরে থাকি, কিন্তু
তা হল সেই দৃঢ় প্রত্যয়, যা সুসমাচারের
মাধ্যমে পবিত্র আত্মা আমাদের হৃদয়ে
দিয়ে থাকেন, আর তা হল, কেবল অন্যদের প্রতি নয়, কিন্তু আমাকেও
কেবল অনুগ্রহে এবং কেবল খ্রীস্টের গুণে, ঈশ্বরের দ্বারা বিনামূল্যে পাপ থেকে
শুচিকরণ, অনন্ত ধার্মিকতা ও পরিত্রাণ দেওয়া হয়েছে। ২২। প্রশ্ন: তা হলে, খ্রীস্টবিশ্বাসীকে কী বিশ্বাস করতে
হবে? উত্তর: সুসমাচারে আমাদের প্রতি যে সমস্ত বিষয় প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে, যা
সংক্ষিপ্ত আকারে সর্বজনীন ও সন্দেহাতীত খ্রীস্টীয় বিশ্বাসের বিভিন্ন বিষয় দ্বারা আমাদের শিক্ষা দেওয়া হয়। ২৩। প্রশ্ন: এই সমস্ত বিষয় কী? উত্তর: ১। আমি
ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, যিনি স্বর্গ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা,
সর্বশক্তিমান, পিতা। ২। এবং
তাঁর একজাত পুত্র, আমাদের প্রভু, যীশু খ্রীস্টে; ৩। যিনি
পবিত্র আত্মা দ্বারা গর্ভস্থ হলেন, কুমারী মরিয়ম থেকে জন্মিলেন; ৪। পন্তীয় পীলাতের সময় দুঃখভোগ করলেন; ক্রুশবিদ্ধ হলেন,
মরলেন ও কবরস্থ হলেন; পরলোকে নামলেন; ৫। তৃতীয় দিনে মৃতদের
থেকে পুনরায় উঠলেন; ৬। স্বর্গে আরোহণ করলেন, এবং সর্বশক্তিমান পিতা ঈশ্বরের দক্ষিণে বসে আছেন; ৭। সেখান থেকে জীবিত ও মৃতদের বিচার
করতে আসবেন। ৮। আমি পবিত্র আত্মায় বিশ্বাস করি। ৯। আমি পবিত্র সর্বজনীন মণ্ডলীতে,
সাধুদের সহভাগিতায় বিশ্বাস করি; ১০। পাপমোচনে, ১১। শরীরের পুনরুত্থানে, ১২। ও অনন্ত জীবনে বিশ্বাস করি। শাস্ত্রপাঠ: ইব্রীয় ১১; প্রেরিত ১৬:১১~১৫; ইফিষীয় ২:১~১০ যখন কোনো ব্যক্তি এমন কথা বলেন, "যে কোনো ভাবে
হোক আমার বিশ্বাস আছে যে, সবই ভালোর দিকে মোর নেবে," তখন তা বিশ্বাস
নয়, তা হল, তার আশা। সেই ব্যক্তি আশা করেন যে, সব
কিছু ভালোর দিকে মোর নেবে। আবার, অনেক সময় লোকেরা 'বিশ্বাস' শব্দকে
ব্যবহার করে, যখন তাদের উচিত ছিল বিশ্বাস নয়, কিন্তু "ইচ্ছাকে"
ব্যবহার করার। বলা হয়ে থাকে, "আপনি যদি কোনো বিষয়ে দৃঢ়
বিশ্বাস করেন, তা হলে, তা অবশ্যই ঘটবে।" এই কথার বাস্তব অথ হল, একজনের ইচ্ছা
বা আগ্রহ এত দৃঢ় যে, তা বাস্তবে রূপায়িত হবে। এই চিন্তা
অনুসারে, বিশ্বাস হল এমন বিষয়, যা মানুষের মধ্য থেকে বের হয়, এবং তাকে বাহ্যিক পৃথিবীর উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়। এই চিন্তাকে এইভাবে বর্ণনা করা
সম্ভব, "বিশ্বাস হল সেই সমস্ত কারণ, যাদের ভিত্তি করে আমরা
বিভিন্ন বিষয় আশা করি, অর্থাৎ বিশ্বাস
হল এখনও অদৃশ্য যে সমস্ত বিষয়, তাদের উৎপাদক।" কিন্তু তা কখনও প্রকৃত
বিশ্বাস নয়। প্রকৃত বিশ্বাস হল, সম্পূর্ণ
ভিন্ন বিষয়। প্রথমত, বিশ্বাস হল এমন বিষয়, যা ভিতর থেকে নয়, কিন্তু বাইরে থেকে
আমার মধ্যে এসে থাকে। সমস্ত বাস্তব ঘটনার
পিছনে একটিই সত্য বর্তমান। আমি কী কল্পনা করি, তার
উপর নয়, কিন্তু ঈশ্বর বাস্তবে কী ঠিক করে রেখেছেন, তার উপর তা নির্ভর
করে। তাই, প্রকৃত বিশ্বাসের অধিকারী
হতে হলে, আমার যা প্রয়োজন, তা হল, এই সত্য সম্বন্ধে
নির্ভরযোগ্য তথ্য। ঈশ্বর তাঁর পবিত্র বাক্যে এই নির্ভরযোগ্য তথ্য আমাদের জোগান
দিয়েছেন। তাঁর বাক্য, তথা বাইবেলে, আমি সৃষ্টি
সম্বন্ধে, মানুষের পাপে পতন সম্বন্ধে, এবং পরিত্রাণের
পূর্ণ পথ সম্বন্ধে শিক্ষা পাই। এই তথ্যকে আমি যখন যথার্থ অর্থে গ্রহণ করি, তখন
থেকে আমি বিশ্বাস করতে শুরু করি। তাই, বাইবেল বিশ্বাসকে বর্তমান চিন্তার সম্পূর্ণ
বিপরীত পথে বর্ণনা করে। "বিশ্বাস হল, প্রত্যাশিত বিষয়ের নিশ্চয়জ্ঞান
(সারাংশ), অদৃশ্য বিষয়ের প্রমাণপ্রাপ্তি (সাক্ষ্য)"
(ইব্রীয় ১১:১)। এ হল এমন বিষয়, যা বাইবেলে ঈশ্বরের প্রকাশের মাধ্যমে আমার কাছে
আসে, এবং সেই প্রকাশের দ্বারা আমার মধ্যে তা উৎপন্ন
হয়। উদাহরণস্বরূপ, সৃষ্টির কথা চিন্তা করা যেতে পারে। "বিশ্বাসে
আমরা বুঝতে পারি, বিশ্বভূমণ্ডল ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা রচিত হয়েছিল, সুতরাং কোনো
প্রত্যক্ষ বস্তু থেকে এই সকল বস্তুর উৎপত্তি হয়নি" (ইব্রীয় ১১:৩)।
অর্থাৎ, ঈশ্বর বাইবেলে, তাঁর বাক্যে সৃষ্টি সম্বন্ধে আমাকে সত্য তথ্য জোগান দিয়েছেন। আমি আমার কল্পনা থেকে এ বিষয়ে কিছু যোগ
করতে পারি না। এ বিষয়ে সমস্ত তথ্য ঈশ্বর নিজে তাঁর প্রকাশের মাধ্যমে আমার মধ্যে
প্রবেশ করেছেন। বাস্তব সম্বন্ধীয় এই সঠিক তথ্য আমার মধ্যে
বিশ্বাস উৎপন্ন করে। এই কারণে প্রেরিতশিষ্য পৌল এমন কথা বলেছেন, "অতএব
বিশ্বাস শ্রবণ থেকে এবং শ্রবণ ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা হয়" (রোমীয়
১০:১৭)। আমরা মা ও তাঁর ছোট সন্তানের মধ্যে সম্পর্কের মাধ্যমে
বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করতে পারি। ছোট ছেলেটি যখন অন্য সবাইকে কত
ভয় করে, তখন তাঁর মাকে সে কেন এত বিশ্বাস করে? এর কারণ এই কি, সেই ছেলে এমন কিছু
করেছে, যার দ্বারা তাঁর মায়ের প্রতি তাঁর আস্থা উৎপন্ন হয়েছে? না কি, এর কারণ,
তাঁর প্রতি তার মা কিছু করেছেন? অবশ্যই, এর কারণ, তার মা তার
প্রতি এমন কাজ করেছেন যে, ছেলেটি তার মায়ে আস্থা রেখেছে। তার জন্ম থেকে তার মা তার
যত্ন নিয়েছেন, আর তা ছেলে জানে, তাই সে তার মায়ে আস্থা রেখেছে। কিন্তু অন্যদের
ক্ষেত্রে, ছেলেটি তাদের সম্বন্ধে যথেষ্ট তথ্যের অধিকারী না হওয়ায়, সে তাদের কাছে
এসে ভয় করে। অর্থাৎ, ছেলেটির বিশ্বাস হল এমন বিষয়, যা বাইরে থেকে ছেলেটির মধ্যে
এসেছে, ঠিক একইভাবে, খ্রীস্টীয় বিশ্বাস হল এমন বিষয়, যা আমাদের বাইরে থেকে আসে। আর
বাস্তব হল, একমাত্র খ্রীস্টবিশ্বাসই আমাদের সত্য বিশ্বাসের উৎস জোগান দিয়ে থাকে,
যেহেতু সত্য কেবল একটাই হতে পারে, এবং বাইবেলে ঈশ্বর সেই সত্য প্রকাশ করেছেন। তাই, আমরা যে প্রশ্নের মুখোমুখি হই, তা হল, বাইবেলের
বার্তা যখন প্রচারিত হয়, তখন কিছু মানুষ তা বিশ্বাস করলেও, অন্যরা তা কেন বিশ্বাস
করে না? উত্তর হল, বিশ্বাসের জন্য দুটি অত্যাবশ্যক বিষয়ের প্রয়োজন। প্রথম বিষয়টি হল,
বাইবেলে আমাদের প্রতি ঈশ্বরের প্রকাশ। এর কারণ কী, তা আমরা একটু আগে দেখেছি। দ্বিতীয় অত্যাবশ্যক বিষয়টি
হল, ঈশ্বরের সেই প্রকাশ গ্রহণ করার জন্য আমাদের ক্ষমতা। কিন্তু আমরা আমাদের স্বাভাবিক প্রকৃতিতে এই ক্ষমতার অধিকারী নই।
তাই, যীশু নিজে এমন কথা বলেছিলেন, "নতুন জন্ম না হলে কেউ ঈশ্বরের রাজ্য
দেখতে পায় না . . . ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারে না" (যোহন ৩:৩,
৫)। এই কারণে, "স্বাভাবিক মানুষ ঈশ্বরের আত্মার বিষয়গুলি গ্রহণ করে না,
কারণ তার কাছে সে সকল মূর্খতা; আর সে সকল সে জানতে পারে না, কারণ তা আত্মিকভাবে
বিচারিত হয়" (১করিন্থীয় ২:১৪)। তাই, বাইবেল আমাদের বলে, আমাদেরকে
পবিত্র আত্মার দ্বারা "জীবিত হতে" হবে (ইফিষীয় ২:৫)। ঈশ্বরের
আত্মা যখন আমাদের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করেন (এই কাজকে সাধারণত
"নতুনজন্ম" বলা হয়), তখন আমরা ঈশ্বরের প্রকাশের সত্য গ্রহণ করতে সক্ষম হই (ফিলীপীয় ২:১৩)। যখন কোনো ব্যক্তি "নতুনজন্ম" লাভ করে, তখন তার হৃদয়ে যে ঘটনা ঘটে, তাকে আমরা খ্রীস্টের দৃশ্যগ্রাহ্য
অলৌকিক কাজে যা ঘটে থাকে, তার সঙ্গে তুলনা করতে পারি। যীশু অন্ধকে দেখবার ক্ষমতা
দিয়েছিলেন এবং মৃতকে জীবন দিয়েছিলেন। যখন সেই অন্ধের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা হয়েছিল, তখন সে পুনরায় দেখতে পেয়েছিল। যখন
সেই মৃতকে জীবন ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তখন সে পুরনায় হাঁটতে
পেরেছিল। ঠিক একইভাবে, যখন কোনো ব্যক্তি পবিত্র আত্মার ক্ষমতায় নতুনজন্ম লাভ
করে, তখন সে বাইবেলের বার্তার বিষয়বস্তু উপলব্ধি করতে পারে ও বিশ্বাস করতে পারে। অর্থাৎ,
বাইরে থেকে যে তথ্য তার কাছে আসে, তা সেই মানুষের মধ্যে বিশ্বাস উৎপন্ন করে, যে তা
গ্রহণ করতে সক্ষম। আর পবিত্র আত্মাই মানুষের ভিতরে সেই পরিবর্তন আনে, যার ফলস্বরূপ
সে পরিত্রাণার্থে সেই তথ্য গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। নতুনজন্মপ্রাপ্ত ব্যক্তি যখন ঈশ্বরের সত্যের আলো গ্রহণ
করে, তখন আমরা সবার আগে যে বিষয় লাভ করি, তা হল, জ্ঞান। যে বাস্তব বিশ্বভূমণ্ডলে
একজন বাস করছে, অবশেষে সে তাকে উপলব্ধি করতে শুরু করে। এই সৃষ্ট
অর্থপূর্ণ বিশ্বভূমণ্ডলে, সে নিজেকে সৃষ্ট বিষয় হিসাবে দেখতে
শুরু করে; সে আরও উপলব্ধি করে, একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশ্যে সে এগিয়ে
চলেছে। সে উপলব্ধি করে, মানুষ পাপে পতিত হয়েছে, এবং আরও উপলব্ধি করে, যীশু পাপীদের
জন্য মরতে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন। সেই মানুষের হৃদয়ে
যখন এই সমস্ত বিষয়ে (এবং অন্যান্য বিষয়ে) সত্য জ্ঞান উৎপন্ন হয়, তখন তা তার মধ্যে বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয় উৎপন্ন করে। যে
ব্যক্তি এই সমস্ত বিষয় উপলব্ধি করে, সে এই সমস্ত বিষয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি না করে
থাকতে পারে না। সে তার নিজের পাপ থেকে পরিত্রাণের প্রয়োজনও উপলব্ধি করে। তাই,
নতুনজন্মপ্রাপ্ত ব্যক্তির মধ্যে জ্ঞান সর্বদা দৃঢ় প্রত্যয়
উৎপন্ন করে। আর এই প্রত্যয়ই একজনকে অবশেষে অনন্ত পরিত্রাণ পাবার জন্য যীশুতে
বিশ্বাস করতে পরিচালিত করে। তাই, সত্য বিশ্বাস, তথা উদ্ধারকারী বিশ্বাসের মধ্যে
সর্বদা জ্ঞান, প্রত্যয় ও আস্থা বর্তমান। অনেক সময় একটি প্রশ্ন করা হয়ে থাকে, আর তা হল, পরিত্রাণ
পাবার জন্য আমাকে কতখানি জ্ঞান লাভ করতে হবে, বা বিশ্বাস করতে হবে? এর উত্তর হল: "ঈশ্বর
তাঁর বাক্যে যে সমস্ত বিষয় প্রকাশ করেছেন, তার সমস্তই" আমাকে বিশ্বাস করতে
হবে। ঈশ্বর তাঁর বাক্যে কোনো বিষয়ে যদি পরিষ্কারভাবে কিছু বলে থাকেন, তা
হলে, আমাদের সত্য বিশ্বাস থাকলে, আমরা তা গ্রহণ করতে বাধ্য। বাইবলের পরিবর্তে
আমাদের নিজেদের জ্ঞান বা যুক্তিকে ভিত্তি করে, আমরা তা কখনও বর্জন করতে পারি না।
যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যুর সময়, তাঁর পাশে যে দস্যু ছিল, তার
কাছে অধিক জ্ঞান লাভের জন্য যথেষ্ট সময় ছিল না। কিন্তু প্রভু যীশু তাকে যে সমস্ত
কথা বলেছিলেন, সে তার সমস্তই বিশ্বাস করেছিল। এই কথা সমস্ত সত্য বিশ্বাসীর প্রতি
প্রযোজ্য। তবুও, আমাদের কী বিশ্বাস করতে হবে, তার সবথেকে প্রাথমিক বিষয় সকল
মণ্ডলীর সবথেকে পুরানো বিশ্বাসসূত্রে, তথা প্রৈরিতীক বিশ্বাসসূত্রে সারসংক্ষেপ
করা হয়েছে। আমাদের পরবর্তী অধ্যায়গুলিতে এই বিশ্বাসসূত্রের
বিভন্ন বিষয় আমরা আলোচনা করব।