HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 21_QUESTIONS 54
2020.03.12 14:03
প্রভুর দিন ২১
হাইডেলবার্গ প্রশ্নোত্তর ৫৪। পবিত্র সর্বজনীন মণ্ডলী সম্বন্ধে
আপনি কী বিশ্বাস করেন? উত্তর: ঈশ্বরের পুত্র, তাঁর আত্মা ও বাক্য দ্বারা, তাঁর নিজের জন্য, পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, সমস্ত মানবজাতির মধ্য থেকে অনন্ত জীবনের জন্য
মনোনীত মণ্ডলীকে, প্রকৃত বিশ্বাসের ঐক্যে, সংগ্রহ
করেন, তার পক্ষসমর্থন করেন ও তাকে রক্ষা করেন; আর তাই, আমি এখন সেই মণ্ডলীর একজন
জীবন্ত সদস্য/সদস্যা এবং চিরকাল সেই মণ্ডলীর জীবন্ত সদস্য/সদস্যা থাকব। শাস্ত্রপাঠ: মথি ১৬:১৩-২৮; ইফিষীয় ২:১১-২২;
প্রেরিত ২০:১৭-৩২ খ্রীস্টের পরিচর্যাকালে সেটি একটি খুবই সঙ্কটময় মুহূর্ত
ছিল। তাঁর অনুসরণকারী অনেকে তাঁকে ছেড়ে চলে যাচ্ছিল। তাঁর বিরোধীদের কাজকর্মও
ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আর তাঁর শত্রুরা তাঁর পতনের জন্য ছক কষছিল। তাঁর পক্ষে
দাঁড়াবার জন্য তাঁর শিষ্যদের সময় উপস্থিত হয়েছিল। তাই, যীশু তাঁদের প্রশ্ন
করেছিলেন, "মনুষ্যপুত্র
কে, এ সম্বন্ধে লোকে কী বলে?" (মথি ১৬:১৩)। তখন তাঁরা তাঁকে বলেছিলেন,
তাঁর সম্বন্ধে তাদের বিভিন্ন মত আছে। তখন যীশু তাঁদের প্রশ্ন করেছিলেন, "আর তোমরা? তোমরা কী বলো, আমি কে?"
(১৫ পদ)। তখন পিতর সঠিক উত্তর দিয়ে বলেছিলেন, "আপনি সেই খ্রীস্ট, জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র" (১৬ পদ)। অন্যদের থেকে বেশি বুদ্ধিমান হওয়ার কারণে যে পিতর এই উত্তর দিতে
পেরেছিলেন, তা নয়, কিন্তু স্বর্গস্থ পিতাই সেই সত্য তাঁর কাছে প্রকাশ করেছিলেন (১৭
পদ)। তারপর, যীশু তাঁদের মণ্ডলী সম্বন্ধে বলেন। তিনি তাঁদের বলেন যে, "এই পাথরের" উপরে তিনি তাঁর মণ্ডলী
গড়বেন এবং পাতালের দ্বারগুলিও তার বিপক্ষে জয়ী হতে পারবে না (১৮ পদ)। "এই পাথরের" অর্থ কী, সে সম্বন্ধে বাইবেল ব্যাখ্যাকারীদের মধ্যে
যথেষ্ট মতের অমিল আছে। এর দ্বারা কি পিতরকে নির্দেশ করা হয়েছে? না কি, এর দ্বারা পিতরের স্বীকারোক্তিকে নির্দেশ করা হয়েছে?
আমাদের চিন্তায়, উভয়কেই নির্দেশ করা হয়েছে! যীশুকে ঈশ্বরের মশীহ হিসাবে বিশ্বাসী পিতরের উপর
মণ্ডলী স্থাপিত হয়েছিল। এটাই এর অর্থ হওয়া উচিৎ, যেহেতু পৌল বলেছেন, "ইতিমধ্যে যে ভিত্তিমূল স্থাপিত হয়েছে, তা-ছাড়া অন্য কোনও ভিত্তিমূল আর
কেউ স্থাপন করতে পারে না, তিনি হলেন খ্রীস্ট" (১করিন্থীয়
৩:১১)। একই সময়ে, মণ্ডলীর ভিত্তি সম্বন্ধে পৌল আরও বলেছেন, "প্রেরিতশিষ্যবর্গ ও ভাববাদীদের ভিত্তিমূলের উপর তোমাদের গেঁথে তোলা হয়েছে,
স্বয়ং খ্রীস্ট যার কোণের প্রধান ভিত্তিপ্রস্তর"
(ইফিষীয় ২:২০)। এই সমস্ত বিবৃতি আত্মা দ্বারা অনুপ্রাণিত পিতরের
বিবৃতির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত: আমাদেরকেও জীবন্ত পাথরের
মতো, একটি আত্মিক আবাসরূপে গড়ে তোলা হচ্ছে, যীশু খ্রীস্টের কাছে আসার
মাধ্যমে (১পিতর ২:৪-৫)। যীশু খ্রীস্ট এখন তাঁর পবিত্র
আত্মার শক্তিতে ও শাস্ত্রবাক্যের সত্যে তাঁর মণ্ডলী গড়ে তুলছেন। যারা তাঁকে
বিশ্বাস করে, তারা জীবন্ত পাথর হয়ে ওঠে, যেমন পিতর নিজে শুরুতে করেছিলেন। কিন্তু
যীশু যে মণ্ডলী গড়ছেন, তা কী ধরনের মণ্ডলী? প্রথম যে বিষয়ের প্রতি আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে, তা হল, যীশু
খ্রীস্ট নিজে এই মণ্ডলী গড়ে চলেছেন। বিভিন্ন দল ও সম্প্রদায়, যা আজ আমাদের
চোখে পড়ে, তাদের মাঝে আমরা যেন এই সত্যকে ভুলে না যাই। অবশ্য এর অর্থ এই নয় যে,
আমরা অন্য সমস্ত বিষয় ভুলে যাব, ও মণ্ডলীর মধ্যে দৃশ্যগ্রাহ্য ঐক্যকে আমাদের
কাজকর্মের একমাত্র নির্দেশক নীতি হিসাবে গ্রহণ করব। না, বাইবেলে, মণ্ডলীকে আবার পবিত্র
বলে বর্ণনা করা হয়েছে। তা আমাদেরকে খ্রীস্টের প্রতি ও পবিত্র শাস্ত্রের প্রতি বিশ্বস্ত হওয়ার আবশ্যকতাকে
স্মরণ করিয়ে দেয়। আমাদেরকে আবার উপলব্ধি করতে হবে, খ্রীস্টের সত্য মণ্ডলী হল "সর্বজনীন।" এর অর্থ, তা সর্বদা একটি জাতির
সংস্কৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, তা অতিক্রম করে বা ছাপিয়ে এগিয়ে যাবে। তাই, কোনো
সংস্কৃতি বা যুগের সঙ্গে মণ্ডলীর একাকরা হবার প্রবণতাকে আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে।
সর্ব যুগের ও সর্ব স্থানের সত্য
মণ্ডলী একটি বিশ্বাসের অধিকারী, যা তাদের মধ্যে বাহ্যিক বিভিন্ন পার্থক্য থাকা
সত্ত্বেও ঐক্যবদ্ধ করে। প্রথম শতাব্দীর খ্রীস্টবিশ্বাসীরা যা বিশ্বাস করত, তা আজকের
খ্রীস্টবিশ্বাসীরা যা বিশ্বাস করে, তার সঙ্গে মূলত এক। আর এখানেই আমরা উপলব্ধি
করি, বিভিন্ন বিশ্বাস-সূত্রে বিশ্বাস করা, মণ্ডলীর পক্ষে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বর
আমাদের যে মহান পরিত্রাণ দান করেছেন, যার কথা শাস্ত্রে প্রকাশ করা হয়েছে, তা ২,০০০
বৎসর পূর্বে, যা প্রকাশ পেয়েছিল, তার সঙ্গে অবিকল এক। এই কারণে আজকের
খ্রীস্টবিশ্বাসীরা প্রৈরিতিক-বিশ্বাসসূত্রের মাধ্যমে তাদের বিশ্বাস স্বীকার করে
থাকেন। যীশু খ্রীস্টের সেই মহান কাজ হল ঐতিহাসিক, আর তাই, তার কোনো পরিবর্তন সম্ভব
নয়। কিন্তু, ঈশ্বরের পরিত্রাণ
পরিকল্পনার বাহ্যিক প্রকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আমাদের চোখে পড়ে। অব্রাহামের
আশীর্বাদে, সমগ্র মানবজাতি কীভাবে অংশগ্রহণ করবে, তা পুরাতন নিয়মে পরিষ্কার করে
বর্ণনা করা হয়নি। অব্রাহামের সঙ্গে শুরুর সময়ে, মণ্ডলী একটি জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ
ছিল। পুরাতন পরিস্থিততে, মল্কিষেদকের মতো যারা সত্য ঈশ্বরের পরিচয় জানত, তারা মারা
গিয়েছিল। তাই, অব্রাহামের পর, প্রায় ২,০০০ বৎসর ধরে, এই মণ্ডলীর সদস্য-সদস্যারা
ছিল মূলত ইস্রায়েল জাতির লোক। অবশ্য, রাহাব কিংবা রূতের মতো কিছু বাইরের মানুষকে
সর্বদা ইস্রায়েলের মধ্যে স্থান দেওয়া হয়েছিল, যার দ্বারা ইস্রায়েলীদের মনে করিয়ে
দেওয়া হয়েছিল যে, তারাই পরিত্রাণের একমাত্র অধিকারী নয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন
যীশু এসেছিলেন, তখন ইহুদি ও পরজাতির মধ্যে দেওয়াল ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল। এখন, পরজাতিদের জন্য পথ খুলে দেওয়া
হয়েছে, যেন তারাও ইহুদিদের ন্যায় ঈশ্বরের সত্য ইস্রায়েল হতে পারে। বাস্তব হল, এখন,
সম্পূর্ণ বিপরীত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইহুদিরা আজ তাদের পূর্ব-সংস্কারের
ফলস্বরূপ, এই মণ্ডলীর সবথেকে বাইরে অবস্থান করছে। তবুও, পুরাতন ও নতুন নিয়মের
সমগ্র যুগ ধরে, একই পদ্ধতিতে, পবিত্র আত্মার সার্বভৌম কাজ আনুসারে, ইহুদি বা
পরজাতি, যাই হোক না কেন, মশীহকে গ্রহণ করে চলেছে। আবার, একদিন আসতে চলেছে, যখন
ব্যাপক সংখ্যায় ইহুদিরা মশীহকে গ্রহণ করবে। কিন্তু তখনও মণ্ডলী একটাই থাকবে - ইহুদি
ও পরজাতিদের মধ্যে বিভক্ত হবে না - যেহেতু যারা যীশু খ্রীস্টে সত্য বিশ্বাসী, তারা
সকলেই একই গৃহের জীবন্ত পাথর। এই প্রশ্নোত্তর যে শেষ দিকটিকে
নির্দেশ করে, তা হল, আমরা যে মুক্তিপ্রাপ্ত বিশ্বাসী দলের অংশ, সে বিষয়ে যেন আমরা নিশ্চিত
হই। আর তা করার একমাত্র উপায় হল, আমরা যেন যীশুর আধিকার হই, তিনি যেন আমাদের প্রভু
বা মালিক হন। আমরা যদি বিশ্বস্তভাবে তাঁতে বিশ্বাস করি ও তাঁকে প্রভু বলে তাঁর
বাধ্য হই, তা হলে, পিতরের জন্য যে কথা সত্য ছিল, তা আমাদের জন্যও সত্য হবে। রক্ত
বা মাংস আমাদেরকে এর অধিকারী করেনি, কিন্তু আমাদের স্বর্গীয় পিতার শক্তি ও
অনুগ্রহই তা আমাদের অধিকারী করেছে।