HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 08_QUESTIONS 24~25
2019.08.01 12:22
প্রভুর দিন ৮ হাইডেলবার্গ প্রশ্নোত্তর ২৪। প্রশ্ন: এই সমস্ত
বিষয় কীভাবে বিভক্ত? উত্তর: তিনটি ভাগে বিভক্ত: প্রথমটি হল, পিতা ঈশ্বর ও
আমাদের সৃষ্টি সম্বন্ধে; দ্বিতীয়টি হল,
পুত্র ঈশ্বর ও আমাদের পাপ থেকে মুক্তি সম্বন্ধে; এবং তৃতীয়টি
হল, পবিত্র আত্মা ঈশ্বর ও আমাদের পবিত্রীকরণ সম্বন্ধে। ২৫। প্রশ্ন: যদিও এক ও একমাত্র
স্বর্গীয় সত্তা বর্তমান, তবুও আপনি তিনটি ব্যক্তির
বিষয় কেন বলছেন, পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা? উত্তর: কারণ ঈশ্বর তাঁর বাক্যে নিজেকে এইভাবে প্রকাশ করেছেন: এই তিন পৃথক ব্যক্তি হলেন এক, সত্য ও অনন্ত ঈশ্বর। শাস্ত্রপাঠ: ইব্রীয় ১:১-৪; যোহন ১:১-১৮; আদি ১৮; মথি ২৮:১৮-২০ পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে একটি ধর্ম অনন্য।
খ্রীস্টধর্মের এই অনন্যতার কারণ হল, ঈশ্বর সম্বন্ধে এই ধর্মের মতবাদ অন্য সমস্ত
ধর্ম থেকে পৃথক। ঈশ্বর সম্বন্ধে খ্রীস্টধর্মের মতবাদকে তিনটি সহজ বিবৃতির দ্বারা
বর্ণনা করা সম্ভব: (১) একমাত্র সত্য ঈশ্বর বর্তমান; (২) সেই সত্য ঈশ্বর তিন ব্যক্তিত্বে তাঁর আস্তিত্ব
রক্ষা করেন; (৩) তিন ব্যক্তির প্রত্যেকে অন্য দুই ব্যক্তি থেকে
পৃথক বা সতন্ত্র। আমরা এই সত্য জেনেছি, কারণ ঈশ্বর
নিজেকে এইভাবে প্রকাশ করেছেন। বাইবেলে সত্য ঈশ্বর নিজেকে ক্রমশ বা ধারাবহিকভাবে
নিজেকে পিতা, পুত্র, এবং পবিত্র আত্মা হিসাবে প্রকাশ করেছেন। আমরা তাঁর এই
প্রকাশকে ‘ক্রমশ বা ধারাবাহিক’ বলেছি, কারণ ঈশ্বর তাঁর প্রকাশের সমস্ত বিষয়বস্তু হঠাৎ একবারে আমাদের দেননি।
পরিবর্তে, দীর্ঘ কাল ধরে তিনি তা আমাদের কাছে প্রকাশ করেছেন। একে বাইবেলে এইভাবে
বর্ণনা করা হয়েছে: “ঈশ্বর পূর্বকালে বহুভাগে ও বহুরূপে ভাববদিদের দ্বারা
পূর্বপুরুষদের কথা বলে, এই শেষ কালে পুত্রেই আামাদের বলেছেন” (ইব্রীয় ১:১)। এই বিবৃতিতে আমরা কয়েকটি বিষয়
লক্ষ্য করছি, প্রথমত, শুরুতে ঈশ্বরের আত্ম-প্রকাশ পরিমাণে কম প্রত্যক্ষ বা সরাসরি
ছিল। পরবর্তী কালে তিনি নিজে যীশু খ্রীস্টের ব্যক্তিত্বে আবির্ভূত হয়েছিলেন (বা
এসেছিলেন)। তাই, আমরা অবাক হই না, যখন দেখি, পুরাতন নিয়মে এক ও একমাত্র ঈশ্বরের
উপর জোর দেওয়া হয়েছে। ঈশ্বর-অনুপ্রাণিত ভাববাদী হিসাবে মোশি চীৎকার করে ঘোষণা
করেছেন: “হে ইস্রায়েল, শোন, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু একই
সদাপ্রভু” (২বিবরণ ৬:৪)। বহুঈশ্বরবাদকে (একাধিক ঈশ্বরের
অস্তিত্বে বিশ্বাস) এইভাবে বর্জন করার পর, ঈশ্বর নিজেকে একাধিক ব্যক্তিত্বে এক
ঈশ্বর হিসাবে প্রকাশ করেছেন। এই কারণে, যীশু খ্রীস্টের আগমন ও (সামান্য কিছু কাল
পরে) পবিত্র আত্মার অবতরণের পূর্ব পর্যন্ত এই সত্য পরিষ্কারভাবে ও সম্পূর্ণ আকারে
প্রকাশিত হয়নি। অবশ্য এর অর্থ এই নয় যে, পুরাতন নিয়মে ত্রিত্ব ঈশ্বর (তিন
ব্যক্তিত্বে এক ঈশ্বর) সম্বন্ধে কিছুই বলা হয়নি। বাস্তবে, পুরাতন নিয়মে এমন অনেক
বিষয় আছে, যাদেরকে ত্রিত্ব ঈশ্বরের আলোকে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। উদাহরণ হিসাবে,
আমরা সেই সমস্ত শাস্ত্রাংশকে চিন্তা করতে পারি, যেখানে সদাপ্রভুর দূতের কথা বলা
হয়েছে ( যেমন আদি ১৮ অধ্যায়)। কিছু অর্থে, এখানে যাঁকে সদাপ্রভুর দূত বলা হয়েছে,
তিনি স্বর্গের ঈশ্বর থেকে সতন্ত্র। আবার, একই সময়ে, এই দূতকে স্বয়ং সদাপ্রভু বলা
হয়েছে! দ্বিতীয়ত, ইব্রীয় পুস্তকের এই
বিবৃতি থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই, তা হল, যীশু খ্রীস্টের ব্যক্তিত্ব ও কাজে ঈশ্বরের
প্রকাশ সম্পূর্ণতা লাভ করেছে। এই কারণে প্রেরিতশিষ্যরা কত পরিষ্কারভাবে শিক্ষা
দিয়েছেন যে, এক ঈশ্বরের সত্তায় তিন ব্যক্তি বর্তমান। তাদের এই সত্যকে এড়িয়ে যাবার
কোনো উপায় ছিল না, যেহেতু তাঁরা যীশুর সঙ্গে সময় কাটিয়েছিলেন এবং পবিত্র আত্মার
অবতরণের সাক্ষী ছিলেন। যীশুর প্রার্থনাশীল জীবন থেকে, তাঁরা জানতেন, পুত্র যীশু
খ্রীস্ট থেকে সতন্ত্র এক ব্যক্তি, তথা স্বর্গীয় পিতা আছেন। একই সঙ্গে তাঁরা
খ্রীস্টের দাবি (এবং তিনি যে সমস্ত পরাক্রমের কাজ করেছিলেন, যেগুলি তাঁর দাবির
পক্ষে পূর্ণ প্রমাণ ছিল) থেকে এ-ও জানতেন যে, তিনি স্বয়ং ঈশ্বর ছিলেন। তারপর, যীশু
যখন তাঁর পিতার কাছে ফিরে যান, তখন তাঁরা (পিতা এবং পুত্র উভয়ে) পবিত্র আত্মাকে
প্রেরণ করেন। প্রেরিতশিষ্যদের কাছ থেকে যীশু যখন স্বর্গে চলে গেছেন, তখন পবিত্র
আত্মা তাঁদের কাছে এসেছেন, এর অর্থ, পবিত্র আত্মাও এক পৃথক ব্যক্তি। এই সমস্ত তথ্য
থেকে, তিন ব্যক্তিত্বে অস্তিত্ব রক্ষাকারী এক সত্য ঈশ্বরে বিশ্বাস না করে
প্রেরিতশিষ্যদের অন্য কোনো উপায় ছিল না। আমরা যখন উপলব্ধি করি যে, এক সত্য
ঈশ্বর সত্যিই তিন ব্যক্তিত্বে অবস্থান করেন, তখন আমরা উপলব্ধি করি, তাঁদের
প্রত্যেক ব্যক্তি অন্য দুই ব্যক্তি থেকে পৃথক বা সতন্ত্র। এটা খুবই পরিষ্কার যে,
কেবল যীশুই (ত্রিত্ব ঈশ্বরের দ্বিতীয় ব্যক্তি) মানব প্রকৃতি ধারণ করে পৃথিবীতে অবতীর্ণ
হয়েছিলেন। আমাদের পাপের জন্য কেবল তিনিই প্রায়শ্চিত্ত সাধন করেছেন। আমাদের পাপের
জন্য পিতা মারা যাননি, পবিত্র আত্মাও মারা যাননি। আবার এটাও খুবই পরিষ্কার যে,
পিতা ঈশ্বরই পুত্র যীশু খ্রীস্টকে প্রেরণ করেছিলেন, পবিত্র আত্মা যীশুকে প্রেরণ
করেননি। আবশ্য, পবিত্র আত্মা নিজে প্রভু যীশু খ্রীস্ট ও পিতার দ্বারা প্রেরিত
হয়েছিলেন। আবার, শাস্ত্রে কেবল পবিত্র আত্মার কথা বলা হয়েছে, যিনি ঈশ্বরের
সন্তানদের নতুনজন্ম দিয়ে থাকেন, যেন তারা যীশুকে জানে ও বিশ্বাস করে। তাই, আমরা
অবাক হই না, যখন দেখতে পাই, খ্রীস্টীয় মণ্ডলীর সবথেকে পুরাতন বিশ্বাস-সূত্রে
ত্রিত্ব ঈশ্বরে বিশ্বাস স্বীকার করা হয়েছে, যার অর্থ, তিন ব্যক্তিত্বে অস্তিত্ব
রক্ষাকারী এক সত্য ঈশ্বরে বিশ্বাস। পরিশেষে আমরা প্রেরিতশিষ্য যোহনের
কথা চিন্তা করতে পারি। যোহন খুব স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন যে, ত্রিত্ব ঈশ্বরের
প্রত্যেক ব্যক্তিত্বে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। “যে কেউ পুত্রকে অস্বীকার করে, সে পিতাকেও পায়নি, যে
ব্যক্তি পুত্রকে স্বীকার করে, সে পিতাকেও পেয়েছে” (১ যোহন ২:২৩)। যারা এই ত্রিত্ব ঈশ্বরকে জানে না ও তাঁতে
বিশ্বাস করে না, তারা ঈশ্বরকে পায়নি, তারা কেবল প্রতিমা পূজা করে থাকে। তাই, আমরা যেন
নিশ্চিত হই যে, সমস্ত যুগের মণ্ডলীর সঙ্গে আমরাও এই সত্য ঈশ্বরে বিশ্বাস করি।