HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 11_QUESTIONS 29~30~28
2019.10.16 15:28
প্রভুর দিন ১১ হাইডেলবার্গ প্রশ্নোত্তর ২৯। প্রশ্ন: ঈশ্বরের পুত্রকে কেন যীশু, অর্থাৎ, পরিত্রাতা
বলা হয়েছে? উত্তর: যেহেতু তিনি আমাদের সমস্ত পাপ থেকে উদ্ধার করেন ও পরিত্রাণ (রক্ষা)
করেন; এবং যেহেতু অন্য কারও কাছে পরিত্রাণ খোঁজা ও পাওয়া সম্ভব নয়। ৩০। প্রশ্ন: তা হলে, যারা তাদের পরিত্রাণ এবং বিশ্বাসীদের কল্যাণ,
তাদের নিজেদের মধ্যে কিংবা অন্য বিষয় বা ব্যক্তির মধ্যে খোঁজে, তারা কি একমাত্র পরিত্রাতা যীশুতে বিশ্বাস
করে? উত্তর: না, তারা তা করে না; যদিও তারা কথায় তাঁতে (যীশুতে) গর্ব করে, তবুও কাজে তারা একমাত্র পরিত্রাতা যীশুকে
অস্বীকার করে; কারণ দুটির মধ্যে কেবল একটি সত্য হতে পারে: হয় যীশু সম্পূর্ণ পরিত্রাতা
নন, নয় যারা প্রকৃত বিশ্বাসে এই
পরিত্রাতাকে গ্রহণ করে, তাদের পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত বিষয় তাঁতে লাভ
করতে তারা বাধ্য। শাস্ত্রপাঠ: কলসীয় ২; রোমীয় ৩:৯-৩১ বাইবেল একটি বিষয়ে খুব পরিষ্কার, আর সেই বিষয়টি হল: পরিত্রাণ
লাভের জন্য কেবল একটি পথ আছে। আর ঈশ্বরই এই পথ ঠিক করেছেন। হ্যাঁ, হিতোপদেশ পুস্তকে, তাই, এমন কথা বলা হয়েছে: "একটি পথ আছে, যা মানুষের দৃষ্টিতে সরল, কিন্তু তার পরিণাম মৃত্যুর পথ" (হিতোপদেশ ১৪:১২)। এখানে, আমরা এর যে কারণকে দেখতে পাই, তা হল, মানুষের পরিত্রাণের জন্য কী প্রয়োজন, তা সে নিজে ঠিক করতে পারে না। না, ঈশ্বরই হলেন একমাত্র ব্যক্তি, যিনি তা ঠিক করেন। আর যে কেন্দ্রীয় সত্য তিনি বাইবেলে প্রকাশ
করেছেন, তা হল, পরিত্রাণের একমাত্র পথ হলেন সেই ব্যক্তি, যাঁকে তিনি আমাদের জন্য
জোগান দিয়েছেন। নীতিগতভাবে, মানুষের পাপে পতনের পরেই, তিনি এই সত্য প্রকাশ
করেছিলেন, যখন তিনি আদম ও হবার জন্য নিজে পোষাকের জোগান দিয়েছিলেন (আদি ৩:২১)। পাপী
হিসাবে আমাদের প্রথম পিতামাতার উলঙ্গতা ঢাকা দিতে, প্রয়োজন হয়েছিল একটি নিষ্পাপ
পশুর মৃত্যু। তাই, একেবারে
প্রথম থেকে, "রক্তপাত ছাড়া পাপের মোচন" সম্ভব ছিল না (ইব্রীয়
৯:২২, লেবীয় ১৭:১১)। এই কারণে ঈশ্বর কয়িনের ধর্ম ও হেবলের ধর্মের মধ্যে পরিষ্কার
পার্থক্য তৈরি করেছিলেন (আদি ৪ অধ্যায়)। কয়িন
তার উপহার হিসাবে পরিবর্ত বলির পশুকে উপস্থিত করেনি, কিন্তু হেবল তা করেছিল। ঈশ্বর
হেবল ও তার বলিকে গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু কয়িন ও তার বলিকে করেননি। কেন? যেহেতু
পরিত্রাণ লাভের জন্য কেবল একটিই পথ আছে। মানুষের পাপে পতনের পর থেকে এই সত্য
সর্বদা একইভাবে কাজ করে চলেছে। পাপ থেকে পরিত্রাণের পথ হল, নির্দোষ একজনের
বলিদানের মাধ্যমে। যখন সেই নির্দোষ পরিবর্তের মৃত্যু ঘটে, যখন সেই নির্দোষ বলির রক্তপাত ঘটে, তখনই কেবল
পাপের মোচন সম্ভব। কিন্তু, এ কথা অবশ্যই সত্য, "বৃষ বা ছাগলের রক্ত যে পাপ হরণ করবে,
এটা হতেই পারে না" (ইব্রীয় ১০:৪)। এর কারণ
খুবই স্পষ্ট: কারণ তাদের মধ্যে কোনো সমতা
নেই। কেবল মানুষকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছে, কিন্তু বৃষ বা ছাগলকে তা করা হয়নি। এ কথা সত্য যে, মানুষের পাপের
কারণে, পুরাতন নিয়মে, বৃষ বা ছাগলকে কষ্টভোগ করতে হয়েছিল। কিন্তু, এই সমস্ত পশু, প্রকৃত অর্থে, পাপীদের কারণে শাস্তি ভোগ করতে পারত না। তা করার জন্য, একটি পশুকে দুঃখ-কষ্টের অর্থ উপলব্ধি
করতে হত। কিন্তু বৃষ বা ছাগল কখনও তা উপলব্ধি
করতে পারে না। এই কারণে, আমরা দেখতে পাই, কেন পুরাতন নিয়মের সময়কার বলিদান পদ্ধতির
ক্রমশ পুনরাবৃত্তি প্রয়োজন ছিল। দিনের
পর দিন ধরে, ধারাবাহিকভাবে, বৃষ ও ছাগলের বলিদান প্রয়োজন ছিল, যেহেতু মানুষের অপরাধের সম্পূর্ণ মূল্য দিতে তা যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু পুরাতন নিয়মের এই সমস্ত পশুবলির মূল্য ছিল, যেহেতু
তা একদিন প্রভু যীশুর দ্বারা যে প্রায়শ্চিত্ত সম্পন্ন হতে চলেছে, তাকে নির্দেশ
করেছিল। এই কারণে, কিছু কালের জন্য বা সেই সময়ের জন্য, ঈশ্বর তাদের গ্রহণ
করেছিলেন, যারা রক্তের বলি নিয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হয়েছিল (যেমন হেবল)। তিনি
পুরাতন নিয়মের এই উপমা বা প্রতীকের দ্বারা তাঁর প্রজাদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন। তিনি
প্রতীকী উপস্থাপনের মাধ্যমে তাদের সেই সত্য প্রদর্শন করছিলেন, যা একদিন প্রভু যীশু
খ্রীস্টের কাজের দ্বারা নিখুঁতভাবে পূর্ণ হতে চলেছে। এই কারণে, মোশির মাধ্যমে
বিভিন্ন পর্বপালেনর বিধান (ceremonial law) দত্ত হয়েছিল। এদের মাধ্যমে ঈশ্বর, বিস্তৃত অর্থে, উপযুক্ত বা সঠিক বলির চরম গুরুত্ব প্রদর্শন করেছেন।
আবার, এই একই কারণে, যিশাইয় ভাববাদী যখন ভবিষ্যৎ মশীহের ছবিকে কথায় প্রকাশ করেছেন,
এবং তিনি যে বলি উৎসর্গ করবেন, তা বর্ণনা করেছেন, তখন তিনি পর্বপালনের বিধানের
ভাষাকে ব্যবহার করেছন (যিশাইয় ৫৩ অধ্যায়), যেখানে তিনি মশীহকে সেই মেষশাবক হিসাবে
বর্ণনা করেছেন, যাঁকে কসাইয়ের কাছে উপস্থিত করা হয়েছে। এর থেকে আরও একটি বিষয় পরিষ্কার, আর তা হল, আমাদের প্রভু
তাঁর জীবন উৎসর্গ করার পর থেকে, কেন পশুবলির প্রয়োজন ফুরিয়েছে। খ্রীস্ট যখন ক্রুশের উপর
মারা যান, তখন প্রকৃত অর্থে তাঁর সন্তানদের
পাপের প্রায়শ্চিত্ত সাধিত হয়েছিল। উপযুক্ত বা যথেষ্ট মূল্য উৎসর্গ করার কারণে, ঈশ্বর অবশেষে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। আর তাই, বাপ্তিস্ম ও
প্রভুর ভোজের রক্তহীন সংস্কার ত্বকচ্ছেদ ও নিস্তারপর্বের রক্তপূর্ণ সংস্কারকে প্রতিস্থাপিত করেছিল। বাইবেলে একে এইভাবে বর্ণনা
করা হয়েছে: "কিন্তু ইনি একই যজ্ঞ চিরকালের জন্য উৎসর্গ করে ঈশ্বরের
দক্ষিণে উপবিষ্ট হলেন, . . . কারণ যারা পবিত্রীকৃত হয়, তাদের তিনি একই নৈবেদ্য দ্বারা
চিরকালের জন্য সিদ্ধ করেছেন" (ইব্রীয় ১০:১২, ১৪)। তাই, যীশুর এমন দাবি শুনেও আমরা অবাক হই না: "আমিই
পথ ও সত্য ও জীবন, আমার মাধ্যমে না আসলে কেউ পিতার কাছে আসে না" (যোহন
১৪:৬)। প্রেরিতশিষ্য যোহন এই কথারই প্রতিধ্বনি করেছেন, যখন তিনি বলেছেন, "পুত্রকে
যে পেয়েছে, সে সেই জীবন পেয়েছে; ঈশ্বরের পুত্রকে যে পায়নি, সে সেই জীবন
পায়নি" (১যোহন ৫:১২)। পিতরও নতুন নিয়েমর যুগের শুরুতে তাঁর প্রচারে
এই কথা বলেছেন, "আর
অন্য কারো কাছে পরিত্রাণ নেই; কারণ আকাশের নিচে, মানুষদের মধ্যে দত্ত এমন আর
কোনো নাম নেই, যে নামে আমাদের পরিত্রাণ পেতে হবে" (প্রেরিত ৪:১২)। তা হলে, যারা যীশু ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তিতে বা বিষয়ে,
সম্পূর্ণভাবে কিংবা আংশিকভাবে বিশ্বাস করে, তাদের বিষয় আমরা কী চিন্তা করব? আমাদের
প্রভু যখন এই পৃথিবীর মাটিতে ছিলেন,
তখনকার ন্যায় আজও, এমন অনেক লোক আছেন, যারা নিজেদের ধার্মিকতায় বিশ্বাস করেন (লূক
১৮:৯)। হ্যাঁ, আজও এমন অনেক লোক আছেন, যারা মিথ্যা মিথ্যা নিজেদের সম্বন্ধে এই
কথা বিশ্বাস করেন যে, তারা খ্রীস্টবিশ্বাসী, কিন্তু তাদের কাছে খ্রীস্ট হলেন, একজন মহান আদর্শবান বোক্তি ছাড়া আর কিছু নন। তারা আসলে যে কথা বিশ্বাস করেন, তা হল, তারা যেহেতু
স্বর্ণ-সন্ধি (golden rule) পালনের জীবন যাপন করেন,
কিংবা যেহেতু তারা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে তাদের জীবন যাপন করেন, সেইহেতু ঈশ্বর তাদের গ্রহণ করবেন! কিন্তু বাইবেল, এর সম্পূর্ণ বিপরীত কথা আমাদের বলে, আর তা হল, কেউই তার
নিজের কাজের দ্বারা ধার্মিকগণিত হবে না (রোমীয় ৩:২০)। আবার এমন অনেকে আছেন, যারা নিজেদের খ্রীস্টবিশ্বাসী বলে মনে
করেন, কিন্তু যীশুর পরিবর্তে কিংবা যীশুর সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ে বা ব্যক্তিতে তারা বিশ্বাস
করেন। উদাহরণস্বরূপ, আমরা তাদের সকলের কথা চিন্তা করতে পারি, যারা কুমারী
মরিয়মে কিংবা সেই সমস্ত ব্যক্তিতে বিশ্বাস করেন, যাদের তারা "সাধু"
বলে থাকেন (বাইবেলে সমস্ত বিশ্বাসীকে সাধু বা পবিত্র বলা হয়েছে, কেবল তাদেরকে নয়,
যাদেরকে তারা বিশেষ পবিত্র বলে থাকেন)। আজকের দিনে, এই মন্দতার প্রতি বেশ
সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করা হয়ে থাকে, এমনকী যারা নিজেদের সংস্কারপন্থী খ্রীস্টবিশ্বাসী
বলে পরিচয় দেন, তারাও। কিন্তু বাইবেলে, আমরা এমন সহিষ্ণু আচরণের চিহ্ন দেখতে পাই না। যখন প্রেরিতশিষ্য
যোহন স্বর্গে গৌরবে পূর্ণ স্বর্গদূতকে দেখতে পেয়ে, তার পায়ে পড়ে তার আরাধনা
করেছিলেন, তখন সেই স্বর্গদূত তাঁকে কী বলেছিলেন, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ: দেখো,
এমন কাজ কোরো না; আমি তোমার সহদাস, এবং তোমার যে ভাইরা যীশুর সাক্ষ্য ধারণ
করে, তাদেরও সহদাস, ঈশ্বরেরই ভজনা কর! (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১০)। একইভাবে,
লোকেরা যখন পিতরের আরাধনা করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সঙ্গে সঙ্গে পিতর তাদের
বলেছিলেন, "উঠুন, আমি নিজেও মানুষ" (প্রেরিত ১০:২৫-২৬)। একজন ব্যক্তি যখন যীশুর সঙ্গে সঙ্গে একই সময়ে নিজেকে, কিংবা কুমারী মরিয়মে,
কিংবা সাধুদের, কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তি বা বিষয়ে বিশ্বাস করে, সে কি "সত্য
অর্থে যীশুকে বিশ্বাস করতে পারে?" বাইবেলের শিক্ষানুসারে, তা সম্ভব নয়, কারণ বাইবেল আমাদের দুটির মধ্যে কেবল একটিকে নির্দেশ করে, অনেকের
চিন্তা মতো দুটিকেই একসঙ্গে নির্দেশ করে না। কারণ বাইবেল পরিষ্কার বলে, "তা
যখন অনুগ্রহে হয়ে থাকে, তখন আর কাজের জন্য হয় না, না হলে, অনুগ্রহ আর অনুগ্রহ থাকে
না" (রোমীয় ১১:৬)। অন্যভাবে বলা যায়, আপনি যদি ঈশ্বরের বিনামূল্যের উপহার হিসাবে পরিত্রাণ লাভ করে থাকেন, তা হলে, আপনি সেই
পরিত্রাণ আংশিকভাবে আপনার কাজের পুরস্কার হিসাবে পেতে পারেন না। কারণ তাদের একটি
অন্যটিকে বাতিল করে। একইভাবে, রোমীয় ৪:৪-৫ পদে বলা হয়েছে, "যে কাজ
করে, তার বেতন তো তার পক্ষে অনুগ্রহের বিষয় বলে নয়, প্রাপ্য বিষয় বলে গণিত হয়। কিন্তু
যে ব্যক্তি কাজ করে না- তাঁরই উপরে বিশ্বাস করে, যিনি ভক্তিহীনকে ধার্মিক গণনা
করেন, তার বিশ্বাসই ধার্মিকতা বলে গণিত হয়।" খ্রীস্টের প্রতি আস্থা কিংবা নিজের উপর আস্থার
(অর্থাৎ, নিজের সৎকাজের উপর আস্থা) ন্যায়, খ্রীস্টের প্রতি আস্থা কিংবা কোনো
সাধুতে আস্থা যেমন কুমারী মরিয়মে আস্থা, হল একই কথা। যেহেতু খ্রীস্টবিশ্বাসের
কেন্দ্রীয় সত্য হল: "যেহেতু সকলই তাঁর থেকে, তাঁর দ্বারা, ও তাঁর জন্য,"
সেইহেতু "যুগে যুগে তাঁরই গৌরব হোক" (রোমীয় ১১:৩৬)।
আজকের দিনের মণ্ডলীতে এই মহান সত্যের ক্ষমতাপূর্ণ পুনর্জাগরণ প্রয়োজন।