HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 15_QUESTIONS 37~39
2019.10.16 15:39
প্রভুর দিন ১৫ হাইডেলবার্গ প্রশ্নোত্তর ৩৭। প্রশ্ন: তিনি দুঃখভোগ করলেন, এই কথার অর্থ কী?
উত্তর: তাঁর পার্থিব জীবনের সমস্ত কাল ধরে, কিন্তু বিশেষত তাঁর জীবনের শেষে, তিনি তাঁর শরীরে ও আত্মায়,
সমস্ত মানবজাতির পাপের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের ক্রোধ বহন করলেন, যেন তাঁর দুঃখভোগের দ্বারা, একমাত্র প্রায়শ্চিত্ত বলি
হিসাবে, তিনি আমাদের শরীর ও আত্মাকে অনন্ত বিনাশ থেকে মুক্ত করেন এবং আমাদের জন্য ঈশ্বরের
অনুগ্রহ, ধার্মিকতা, ও অনন্ত জীবন অর্জন করেন। ৩৮। প্রশ্ন: বিচারক হিসাবে পন্তীয় পীলাতের অধীনে তিনি কেন দুঃখভোগ করলেন? উত্তর: যেন তিনি, নির্দোষ হয়েও, একজন
পার্থিব বিচারকের দ্বারা দোষী সাব্যস্ত হন, এবং তার দ্বারা ঈশ্বরের সেই মারাত্মক বিচার
থেকে আমাদের স্বাধীন করেন, যার যোগ্য পাত্র আমরা ছিলাম। ৩৯। প্রশ্ন: অন্য কোনো মৃত্যুতে না মরে, ক্রুশবিদ্ধ হয়ে তাঁর মৃত্যুর মধ্যে কি বেশি কিছু আছে? উত্তর: হ্যাঁ, কারণ তার দ্বারা আমি নিশ্চিত
যে, আমার উপর যে অভিশাপ বিরাজ করছিল, তা তিনি নিজের উপর তুলে নিয়েছেন; যেহেতু ক্রুশের
উপর মৃত্যু ছিল ঈশ্বরের দ্বারা
অভিশাপযুক্ত। শাস্ত্রপাঠ: যোহন ১৭; ১০:১-৩০ আমাদের প্রভু পৃথিবীতে
সারা জীবন ধরে দুঃখভোগ করেছিলেন। পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে তিনি পিতার সঙ্গে ছিলেন।
মানুষের পাপে পতনের পূর্বেও যদি তিনি মানুষ হতেন, তা হলে, তা-ও নিজ মান ক্ষুন্ন
করার কাজ হত। কারণ পাপ না থাকলেও, তাঁর সৃষ্টির স্তরে সৃষ্টিকর্তার "নেমে আসা" এক মহা বিষ্ময়কর কাজ হত।
কিন্তু খ্রীস্ট যখন সত্যি সত্যি নেমে এসেছিলেন, তখন মানবজাতি পাপে পতিত ছিল, এবং
জগতে পাপ ও মন্দতা ছেয়ে গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও, তিনি এই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
আর এর মধ্যে যে কী পরিমাণে নিজের মানহানি জড়িত, তা কে উপলব্ধি করতে পারে? সমস্ত মানুষই, কম হোক বা বেশি হোক, দুঃখ
ও কষ্ট ভোগ করে থাকে। তবুও, আমাদের ক্ষেত্রে, তা পছন্দের বিষয় নয়। আমরা আমাদের
ইচ্ছায় আমাদের আস্তিত্ব লাভ করি না, কিন্তু অন্যদের ইচ্ছায় (আমাদের পিতামাতাদের
ইচ্ছায় এবং শেষপর্যন্ত ঈশ্বরের ইচ্ছায়)। কিন্তু যীশুর ক্ষেত্রে এই কথা প্রয়োজ্য
ছিল না। তিনি তাঁর ইচ্ছায় মানবজাতির মধ্যে প্রবেশ করেছিলেন (এবং অবশ্যই, একইসঙ্গে
পিতা ঈশ্বরের সার্বভৌম ইচ্ছানুসারে), আর তিনি তা করেছিলেন, যেন তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে
আমাদের বিচ্ছিন্নতার যে মূল কারণ পাপ, সেই সমস্যার সমাধান করতে পারেন। সমস্ত
মানুষকে আদমে সৃষ্টি করা হয়েছিল। তাই, আদমের প্রথম পাপে তারা সবাই আদমের সঙ্গে
পাপে পতিত হয়েছিল। অতএব, পাপে পতিত সমস্ত মানুষের উপর ঈশ্বরের ক্রোধ অবস্থান
করেছিল। এ হল সেই সমস্যা, যার সমাধান করতে, যীশু এই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ঐশ্বরিক
ন্যায়বিচার পূর্ণ করতে তিনি নিজেকে প্রায়শ্চিত্ত বলি হিসাবে উৎসর্গ করতে এসেছিলেন।
আর এই লক্ষ্য পূর্ণ করতে তিনি দুটি কাজ করেছিলেন: প্রথমত, তিনি ঈশ্বরের প্রতি
সক্রিয় (active) বাধ্যতা প্রদর্শন করেছিলেন। আর্থাৎ,
তিনি ঈশ্বরের সমস্ত আজ্ঞা নিখুঁতভাবে পালন করেছিলেন। তিনি তা তাঁর পার্থিব জীবনের
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাধন করেছিলেন। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে কেউই কখনও কোনো পাপ দেখতে
পায়নি। খ্রীস্টও কখনও নিজে তাঁর কোনো পাপ স্বীকার করেননি। আর কেবল তাই নয়, স্বর্গস্থ
পিতা পর্যন্ত তাঁর মধ্যে কোনো পাপ পাননি, যেহেতু তিনি এমন কথা বলেছেন, "ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, এঁর দ্বারা আমি সন্তুষ্ট" (মথি ৩:১৭)। দ্বিতীয়ত, যীশু যে বিষয় করেছিলেন,
তা হল, তিনি পরোক্ষ (passive) বাধ্যতা প্রদর্শন
করেছিলেন। এর অর্থ, তিনি তাঁর সন্তানদের পাপের জন্য যে শাস্তি তাদের পাওনা ছিল, তা
তিনি সম্পূর্ণভাবে নিজে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি পূর্ণ মাত্রায় তাদের শাস্তি গ্রহণ
করেছিলেন। যখন তাঁকে আঘাত করা হয়েছিল, তাঁর গায়ে থুতু দেওয়া হয়েছিল, তাঁকে কষ্ট
দেওয়া হয়েছিল, এবং সর্বোপরি, যখন তাঁকে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল, পিতা তাঁকে পরিত্যাগ
করেছিলেন, তখন তিনি এই কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, খ্রীস্টের দ্বারা সাধিত প্রায়শ্চিত্ত কাজের উপকার যে
কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই, সমস্ত মানুষ লাভ করে, তা নয়। প্রশ্নোত্তর যখন এমন কথা বলে
যে, তিনি "সমস্ত মানবজাতির পাপের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের ক্রোধ বহন করলেন," তখন তা এই অর্থে বলে না। এই কথার দ্বারা যে অর্থ প্রকাশ করা হয়েছে, তা হল, আমাদের
পরিত্রাতার উপর ঈশ্বরের যে ক্রোধ নেমে এসেছিল, তা শেষদিনে যারা বিনষ্ট হবে, তাদের
উপর যে ক্রোধ ঢেলে দেওয়া হবে, তা থেকে আলাদা নয়। না, তা হল, সেই একই ক্রোধ। তা হল,
চরম বিনাশের ক্রোধ। কিন্তু, যীশু যাদের জন্য মরেছিলেন, তারা ছিল "সমগ্র মানবজাতির" একটি অংশ মাত্র, স্বর্গস্থ
পিতা যাদেরকে তাঁর হাতে সমর্পণ করেছিলেন। এই সত্য আমরা জানি, যেহেতু যীশু নিজে তা
আমাদের বলেছেন। যোহন ১৭ অধ্যায়ে, আমরা তাঁর "মহাযাজকীয় প্রার্থনাকে" দেখতে পাই, যে প্রার্থনা তিনি তাঁর ক্রুশীয় মৃত্যুর ঠিক
পূর্বে করেছিলেন। এই প্রার্থনায়, তিনি পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেছেন, তাঁর আগামী
দুঃখভোগ সমস্ত মানুষের পরিত্রাণের জন্য ছিল না, কিন্তু মানবজাতির সেই আংশের
মানুষের জন্য, যাদেরকে পিতা ঈশ্বর তাঁর হাতে সমর্পণ করেছিলেন। সেদিন তিনি যে কথা
বলেছিলেন, তা হল: "আমি জগতের জন্য নিবেদন করছি না, কিন্তু যাদেরকে তুমি আমাকে দিয়েছ, তাদের জন্য,
কারণ তারা তোমারই" (যোহন ১৭:৯)। খ্রীস্ট কোনো ব্যতিক্রম ছাড়া,
সমস্ত মানুষের জন্য নয়, কিন্তু এই সমস্ত মানুষের পরিবর্তে মারা গিয়েছিলেন। এই
অর্থেই প্রশ্নোত্তর এমন কথা বলেছে, "যেন তাঁর দুঃখভোগের
দ্বারা, একমাত্র প্রায়শ্চিত্ত বলি হিসাবে, তিনি আমাদের শরীর ও আত্মাকে
অনন্ত বিনাশ থেকে মুক্ত করেন এবং আমাদের জন্য ঈশ্বরের অনুগ্রহ, ধার্মিকতা,
ও অনন্ত জীবন অর্জন করেন। " এখানে, "আমাদের" শব্দের দ্বারা ঈশ্বরের প্রজাদের, যারা প্রকৃত বিশ্বাসী, তাদের নির্দেশ করা
হয়েছে। প্রেরিতশিষ্য পৌলের কথানুসারে, "যে সকল কর্তৃপক্ষ আছেন, তাঁরা ঈশ্বর-নিযুক্ত" (রোমীয় ১৩:১)। এর অর্থ,
পন্তীয় পীলাতও ঈশ্বরের সার্বভৌম নিযুক্তি অনুসারে, সেই সময় রোমীয় শাসনকর্তা ছিলেন।
তখন ইস্রায়েলের উপর মহান রোমীয় সাম্রাজ্যের কর্তৃত্বও কোনো দুর্ঘটনা ছিল না, আর
ঈশ্বরের পুত্র সেই সময় সেই সাম্রাজ্যের কর্তৃত্বের অধীনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আর এটাও
কোনো দুর্ঘটনা ছিল না যে, এই সরকারী শাসনকর্তার অধীনে যীশুর বিচার সাধিত হয়েছিল,
যিনি প্রথমে এই কথা বলেছিলেন, "আমি এঁর কোনো দোষই
পাচ্ছি না" (যোহন ১৯:৪) এবং তারপর তাঁকে নিষ্ঠুর শাস্তিদানের
জন্য সমর্পণ করেছিলেন- প্রথমে, তাঁকে মারাত্মক বেত্রাঘাত করা হয়, এবং তারপর আরও
মারাত্মক মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়! সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, যিনি
পৃথিবীর সমস্ত বিষয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ চালান, এবং তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য সমস্ত
কাজ একসঙ্গে সাধন করেন, তিনি এইভাবে এই সমস্ত প্রধান ঘটনা সর্বসাধারণের
দৃষ্টিগোচরে আনেন। আর তাই, এই সমস্ত ঘটনা হল, সর্বসাধারণের ঘটনার রেকর্ড যে, প্রভু
যীশুর মধ্যে যদিও কোনো দোষ পাওয়া যায়নি, তবুও পাপে পতিত মানুষের প্রতি যে মৃত্যু
প্রযোজ্য ছিল, তাঁকে সেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। প্রেরিতশিষ্য বিষয়টিকে এইভাবে বর্ণনা
করেছেন, "যিনি পাপ জানতেন না, তাঁকে তিনি আমাদের
জন্য পাপস্বরূপ করলেন, যেন আমরা তাঁতে ঈশ্বরের ধার্মিকতাস্বরূপ হই " (২করিন্থীয় ৫:২১)। পুরাতন নিয়মে বলা হয়েছিল, "যে ব্যক্তিকে টাঙ্গান যায়, সে ঈশ্বরের শাপগ্রস্ত" (২বিবরণ ২১:২৩)। মোশির এই কথার
প্রেক্ষাপট হল, প্রাণদণ্ডের যোগ্য অপরাধে অপরাধী ব্যক্তির প্রতি কী করা হবে, সে
বিষয়ে মোশি বলেছেন। এমন ব্যক্তির মৃতদেহকে সারা রাত ধরে টাঙ্গিয়ে রাখা যাবে না,
যেহেতু তা করলে ভূমিকে অশুচি করা হবে। যার অর্থ, সেই ভূমি সদাপ্রভুর কাছে ঘৃণ্য
হবে। পরিণামস্বরূপ, সেই দুষ্ট ব্যক্তি, যাকে এইভাবে প্রাণদণ্ড দেওয়া হবে, তাকে
ঈশ্বরের দৃষ্টি থেকে দূর করতে হবে, এবং তাই-ই বাস্তবে করা হয়েছিল। আর ঈশ্বরের সদয়
তত্ত্বাবধান অনুসারে, এই ধরণের মানুষের জন্য যে প্রাণদণ্ড বরাদ্দ ছিল, যীশুর উপর
তা চাপানো হয়েছিল। এ সমস্তের মধ্যে যেহেতু আমরা ঈশ্বরের হাতকে দেখতে পাই, সেইহেতু
আমরা এই দৃঢ় প্রত্যয় লাভ করি যে, হারিয়ে যাওয়া পাপীদের পরিবর্ত হিসাবে তিনি মারা
গিয়েছিলেন। আর এই সত্য জানার দ্বারা, আমরা আশ্বস্ত হতে পারি যে, আমাদের জন্য তিনি
যা করেছেন, তা যথেষ্টর থেকে অধিক ছিল। যীশুর দুঃখভোগ ও মৃত্যুর পরিকল্পনা সমস্ত মানুষের পরিত্রাণের জন্য করা হয়নি। কিন্তু
আমরা যেন কখনও এ কথা ভুলে না যাই যে, যীশুর বলিদানের মূল্য চরম অর্থে অনন্ত। খ্রীস্ট
যে দুঃখভোগ করেছেন, তা সমগ্র মানবজাতিকে পরিত্রাণ করতে যথেষ্ট থেকে বেশি ছিল। এই
কারণে, কারোর কখনও এই ভয় পাবার প্রয়োজন নেই যে, খ্রীস্টের মহামূল্য রক্ত পরিত্রাণ
কাজ সম্পন্ন করতে যথেষ্ট ক্ষমতার অধিকারী ছিল না। মহত্তম পাপীকে পর্যন্ত পরিত্রাণ
করার কাজে তা যথেষ্ট থেকে অধিক ছিল, আর তাই, যে কেউ বিশ্বাসে যীশুর কাছে আসে, সে
অনন্ত পরিত্রাণ লাভ করে।