HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 14_QUESTIONS 35~36
2019.10.16 15:37
প্রভুর দিন ১৪ হাইডেলবার্গ প্রশ্নোত্তর ৩৫। প্রশ্ন: তিনি পবিত্র আত্মা দ্বারা গর্ভস্থ হলেন, কুমারী মরিয়ম থেকে জন্মালেন, এই
কথার অর্থ কী? উত্তর: এর অর্থ, ঈশ্বরের অনন্ত পুত্র,
যিনি নিজে এখন ও চিরকালের জন্য সত্য ও অনন্ত ঈশ্বর, তিনি পবিত্র আত্মার কাজের দ্বারা,
কুমারী মরিয়মের রক্ত ও মাংসের মানব-প্রকৃতি নিজে গ্রহণ করেছিলেন, যেন তিনি আবার দাউদের সত্য বংশধর হন,
পাপ ছাড়া সমস্ত বিষয়ে তাঁর ভাইদের সদৃশ হন। ৩৬। প্রশ্ন: খ্রীস্টের পবিত্র গর্ভস্থ হওয়া ও জন্মগ্রহণ করা থেকে আপনি কী উপকার
লাভ করেন? উত্তর: তিনি আমাদের মধ্যস্থ, এবং তাঁর
নিষ্পাপ ও নিখুঁত পবিত্রতায় ঈশ্বরের দৃষ্টিতে তিনি আমার পাপ ঢাকা দেন, যে পাপে আমি গর্ভস্থ হয়েছিলাম
ও জন্মগ্রহণ করেছিলাম। শাস্ত্রপাঠ: গীত ১১০; মথি ১:১-২৫; লূক ১:২৬-৫৫ আপনি কি কখনও বাইবেলকে
একঘেয়েমির পুস্তক বলে মনে করেছেন? সাধারণত, আমরা যখন বাইবেলের বিভিন্ন বংশাবলি-পত্র পাঠ করি, তখন এমন চিন্তা
করে থাকি। এই কারণে, এই সমস্ত শাস্ত্রাংশের উপর আমরা তেমন প্রচার শুনতে পাই না
(যেমন আদি ৫ অধ্যায়)। তবুও, এমন অনেক ঘটনা আছে, যখন ঈশ্বর এই সমস্ত নির্দিষ্ট শাস্ত্রাংশ
ব্যবহার করেই, অনেকের জীবনে পরিত্রাতার প্রয়োজনের উপলব্ধি দিয়েছেন। একজনের কথা
আমরা জানি, যিনি একজন পালক মহাশয়কে আদিপুস্তক ৫ অধ্যায় পাঠ করতে শুনছিলেন। তিনি
দেখতে শুরু করেছিলেন, মহা-জলপ্লাবনের পূর্বে যে সমস্ত লোক পৃথিবীতে বসবাস করত, তাদের
প্রত্যেকের ইতিহাস শেষ হয়েছে, "আর তিনি মরলেন" বলে। এর পূর্বে যা কখনও ঘটেনি, সেদিন হঠাৎ তাঁর কাছে ভোরের আলোর ন্যায় ঘটেছিল,
তাঁর কাছে এই সত্য প্রকাশিত হল যে, এ হল মানুষ আমাদের পরিস্থিতির যথার্থ বর্ণনা। আমরা
জন্মগ্রহণ করেছি, আমরা কিছু কাল বেঁচে থাকি, আর তারপর – তাড়াতাড়ি হোক কি দেরিতে
হোক- আমাদের মরতে হয়। তিনি যখন এই সত্য দেখতে পেলেন, তিনি তখন তাঁর জীবনে
পরিত্রাতার প্রয়োজন উপলব্ধি করলেন, যিনি সেই মৃত ও মৃত্যুর উদ্দেশে এগিয়ে চলা
ব্যক্তিকে জীবন ফিরিয়ে দিতে সক্ষম। কিন্তু এই দুঃখময় পরিস্থিতির পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব? আর তার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়ের কে
অধিকারী? এ হল সেই প্রশ্ন, যার উত্তর ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন,
যখন তিনি তাঁর আনন্ত পুত্রকে মানব প্রকৃতির অধিকারী করে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন।
কিন্তু একাধারে ঈশ্বর ও মানুষ হতে, ঈশ্বরের পুত্র কীভাবে মানুষ হয়েছিলেন? সত্য, পুরাতন নিয়মের প্রকাশের বিভিন্ন মহান নিগূঢ়তত্ত্বের (রহস্যের)
মধ্যে এটি একটি, আর এ হল এমন রহস্য, যা কারোর পক্ষে অনুধাবন করা সম্ভব ছিল না। যে
সমস্ত ইহুদি যীশুর দাবি শুনে অসন্তুষ্ট হয়েছিল, তাদের প্রতি যীশুর প্রশ্নের মধ্যে
আমরা বিষয়টিকে পরিষ্কার দেখতে পাই। তিনি যেহেতু নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র বলে দাবি
করেছিলেন, সেইহেতু তারা বলেছিল, এর দ্বারা তিনি নিজেকে ঈশ্বরের সমান দাবি করছেন। এ
বিষয়ে তাদের চিন্তা সঠিক ছিল- কারণ, তিনি যে ঈশ্বরের সমান, তা তিনি নিজেই বলেছিলেন
(যোহন ৫:১৯-৩০)। তিনি আবার তাদেরকে ২টি প্রশ্ন করেছিলেন,
যাদের দ্বারা বিষয়টির কেন্দ্রকে নির্দেশ করেছেন। তাঁর প্রথম প্রশ্নটি ছিল :
"খ্রীস্টের বিষয় তোমাদের কেমন বোধ হয়, তিনি কার সন্তান?"
(মথি ২২:৪২)। তারা উত্তর দিয়েছিল, "দাউদের সন্তান।" (মথি ২২:৪২)। তাদের এই উত্তর অবশ্যই সঠিক উত্তর ছিল। কিন্তু, তারপর যীশু আরও একটি
প্রশ্ন করেন, "তা হলে, দাউদ কী প্রকারে আত্মার
আবেশে তাঁকে 'প্রভু' বলেন? . . . দাউদ যখন তাঁকে প্রভু বলেন, তিনি কী প্রকারে তাঁর সন্তান?" (মথি ২২৪৩-৪৫)। তারা এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। তারা যদিও এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি, নতুন নিয়মে কিন্তু আমাদের এই
প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে, বিশেষত, লূক ও মথির লেখা সুসমাচারে। এই দুই সুসমাচার
অনুসারে, মরিয়ম নামে একজন অবিবাহিতা যুবতী ছিলেন, যিনি যোষেফ নামে এক পুরুষের
সঙ্গে বিবাহের জন্য বাগদত্তা ছিলেন। যোষেফ (কিংবা কোনো পুরুষের সঙ্গে) তাঁর কোনো যৌন
সম্পর্ক ছিল না, তবুও তিনি গর্ভবতী হয়েছিলেন। যোষেফ যখন জানতে পেরেছিলেন, মরিয়ম
গর্ভবতী হয়েছেন, তখন তিনি মনে করেছিলেন, মরিয়ম আবিশ্বস্ততার কাজ করেছেন। সেই সময়
ঈশ্বর যদি সরাসরি হস্তক্ষেপ না করতেন, তা হলে, সেই মুহূর্তে যোষেফ তাদের বিবাহের
পরিকল্পনা মুছে ফেলতে পারতেন। কিন্তু ঈশ্বরের একজন দূত যোষেফের কাছে আসেন এবং তাঁর
কাছে বিষয়টি পরিষ্কার করে বর্ণনা করেন। তিনি তাঁকে বলেন, কোনো মানুষ নয়, কিন্তু
স্বয়ং ঈশ্বরই তাঁর সার্বভৌমত্বে মরিয়মকে গর্ভবতী করেছেন। তাই, যোষেফ মরিয়মকে তাঁর
স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করেন, কিন্তু যীশুর জন্ম হওয়া পর্যন্ত তিনি মরিয়মের সঙ্গে যৌন
সম্পর্ক থেকে বিরত থাকেন। এখন, মরিয়মের প্রতি কী ঘটেছিল, তা ঈশ্বর প্রেরিত দূত মরিয়মের কাছে ব্যাখ্যা
করেছিলেন : "পবিত্র আত্মা তোমার উপরে আসবেন, এবং পরাৎপরের শক্তি তোমার উপরে ছায়া করবে,
এই কারণে যে পবিত্র সন্তান জন্মাবে, তাঁকে ঈশ্বরের পুত্র বলা যাবে" (লূক ১:৩৫)। খ্রীস্টের অলৌকিকভাবে গর্ভস্থ হওয়ার
বিষয় এর থেকে বেশি কিছু জানার অধিকার আমাদের দেওয়া হয়নি। আমাদের পক্ষে, এ কথা
জানাই যথেষ্ট যে, ঈশ্বরের পর্যাপ্ত ক্ষমতাই কোনো পুরুষ ছাড়া মরিয়মকে তাঁর গর্ভে একটি
শিশুকে ধারণ করতে সক্ষম করেছিল। আর ঈশ্বর এই পদ্ধতিকে ব্যবহার করে, আমাদের
পরিত্রাতাকে একাধারে ঈশ্বর ও মানুষ করেছিলেন। যার ফলস্বরূপ, তিনি একদিকে, ঈশ্বর
প্রকৃতির অধিকারী ছিলেন, এবং একইসঙ্গে আমাদের রক্ত ও মাংসের অধিকারী ছিলেন, যা
তিনি কুমারী মরিয়মের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। যীশু যদি মানুষ পিতা ও মানুষ মাতা থেকে
জন্মগ্রহণ করতেন, তা হলে, তিনি অন্য সমস্ত মানুষের ন্যায় পাপে পতিত আদমের পাপপূর্ণ
প্রকৃতিতে অংশ নিতে বাধ্য হতেন। কিন্তু সম্যকভাবে, যেহেতু এটা ঘটনা নয়, সেইহেতু, তিনি
আদমের অপরাধে অংশ নেননি। একটি বিশেষ, অতিপ্রাকৃতিক, পদ্ধতিতে, তাঁর মানব প্রকৃতি অস্তিত্ব
লাভ করেছিল, যেন তিনি একাধারে ঈশ্বর ও মানুষ হন, এবং তাঁর মানব-প্রকৃতিতে তিনি
পাপশূন্য হন। কিছু বৎসর আগে, একটি ঈশতাত্ত্বিক বিদ্যালয়ের ক্লাসে, একটি উত্তপ্ত আলোচনা
হয়েছিল, বিষয়টি ছিল, আমাদের পরিত্রাণের জন্য খ্রীস্টের কুমারীর গর্ভে জন্মের মতবাদে
বিশ্বাস অত্যাবশ্যক কি না। সেই বিতর্কের কোনো শেষকথায় উপনীত হওয়া সম্ভব হয়নি,
যেহেতু দুই পক্ষ দুটি ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে প্রশ্নটির উত্তর দিতে চেষ্টা করেছে। একপক্ষ,
যে ইচ্ছা থেকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্টা করেছে, তা হল, পরিত্রাণ পাবার জন্য
আমাদের কতখানি জানতে ও বিশ্বাস করতে হবে। আর এই দৃষ্টিকোণ থেকে, উপরের প্রশ্নের
উত্তর হল, নেতিবাচক। যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যুর সময় তাঁর এক দিকের দস্যু পরিত্রাণ
পেয়েছিল, কিন্তু যতদূর সম্ভব, সে কুমারী মরিয়মের গর্ভে যীশুর জন্মের কথা জানত না (ফলস্বরূপ,
বিশ্বাসও করত না)। অন্যপক্ষ, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যে যুক্তির কথা বলেছে,
তা হল, তারা জানতে চেয়েছে, আমাদের পাপ থেকে পরিত্রাণ করার জন্য খ্রীস্টকে কী ধরণের
প্রকৃতির অধিকারী হওয়ার প্রয়োজন ছিল। তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে, খ্রীস্টের কুমারী
গর্ভে জন্মের মতবাদ হল অত্যবশ্যক। আমরা এমন পরিত্রাতা ছাড়া মুক্তি পেতাম না, যিনি
(১) আমাদের মানব প্রকৃতিতে অংশগ্রহণ করেছেন, (২) তবুও, আমাদের পাপপূর্ণ প্রকৃতিতে
অংশগ্রহণ কেরননি, এবং (৩) আমাদের পাপ থেকে পরিত্রাণের মহান কাজ সম্পন্ন করতে যে
অসীম ক্ষমতার প্রয়োজন ছিল, তার অধিকারী ছিলেন। এখানে দুটি বিষয় খুবই স্পষ্ট। আমরা যেন তাদের গুলিয়ে না ফেলি। আর তা হল, আমাদের
সীমিত জ্ঞান সত্ত্বেও ঈশ্বর আমাদের পাপ থেকে পরিত্রাণ করতে সক্ষম, কিন্তু আমাদের
উপলব্ধি করতে হবে, এমন সত্যের বিষয়বস্তুকে আমরা হ্রাস করতে বা কমাতে পারি না। বাইবেল যে একমাত্র পরিত্রাণের কথা বলে, তা আমরা কেবল যীশুতে লাভ করে থাকি, এবং
সেই একমাত্র যীশু, যিনি প্রকৃত অস্তিত্বের অধিকারী, তিনি ঈশ্বরের "পবিত্র আত্মা দ্বারা গর্ভস্থ
হয়েছিলেন" এবং "মরিয়মের
গর্ভে জন্মেছিলেন।" আমরা যত বেশি সুসমাচারের কাহিনী পাঠ
করি, এবং তাদের বর্ণনার মাধ্যমে খ্রীস্টের সঙ্গে পরিচিত হই, আমরা তত বেশি উপলব্ধি
করি, যীশুকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে হলে, এই মতবাদ কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। যারা তাঁকে
জেনেছিল, তারা সকলে যে বিষয় সাক্ষ্য দিয়েছে, এই মতবাদকে বাদ দিয়ে আমরা তা কীভাবে
ব্যাখ্যা করতে পারি? তাঁর বিরুদ্ধে কেউ উপযুক্ত কোনো পাপ,
কোনো মন্দতা, বা কোনো দোষ আরোপ করতে পারেনি। এমনকী পীলাত পর্যন্ত, যিনি তাঁকে
মারাত্মক মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছিলেন, তিনিও স্বীকার করেছিলেন, তিনি যীশুর কোনো
পাপ পাননি (যোহন ১৮:৩৮)। আবার, যে বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিকে
সবথেকে বেশি আকর্ষিত করে, তা হল, তাঁর সবথেকে কাছের বা ঘনিষ্ঠ শিষ্যরা পর্যন্ত,
যাঁরা প্রতিদিন তাঁর সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন, যাঁরা তাঁর সঙ্কটকালেও তাঁর সঙ্গে ছিলেন, তাঁরা
সর্বসম্মতভাবে স্বীকার করেছেন, তিনি নিষ্পাপ ছিলেন। এখন, যীশু যদি মানুষ হয়ে থাকেন
(আর সে বিষয়ে কোনো প্রশ্নই নেই), তা হলে, এটা কীভাবে সম্ভব হয়েছিল? তিনি যদি প্রথম থেকেই পৃথক না হতেন, তা হলে, তা কীভাবে সম্ভব ছিল? তাই, সুসমাচারের লেখনীগুলি যখন তাঁর অলৌকিকভাবে গর্ভস্থ হওয়ার কথা বলে, তা
যে যথার্থ, তা যেন পরিষ্কার হয়। এই মতবাদ যেহেতু সত্য, সেইহেতু আমরা আমাদের এক নম্বর সমস্যার সমাধান পেয়েছি। অবশেষে,
আমি এমন একজনকে পেয়েছি, যিনি আমার পাপ ও অপরাধ গ্রহণ করতে এবং চিরকালের জন্য
ঈশ্বরের দৃষ্টি থেকে তাদের দূর করতে সক্ষম। এই অর্থে, খ্রীস্টের কুমারীর গর্ভে
জন্মগ্রহণ চরম গুরুত্বপূর্ণ। কেবল এইভাবে জন্মগ্রহণ করার কারণে, আমরা আমাদের পাপ
থেকে একজন উপযুক্ত পরিত্রাতাকে পেয়েছি।