HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 19_QUESTIONS 50~52
2020.03.12 14:00
প্রভুর দিন ১৯
হাইডেলবার্গ প্রশ্নোত্তর ৫০। 'এবং সর্বশক্তিমান
পিতা ঈশ্বরের দক্ষিণ পার্শ্বে (ডান দিকে) বসিয়া আছেন,' এই কথা কেন যোগ করা হয়েছে? উত্তর: কারণ এই লক্ষ্য আর্জনের
জন্য খ্রীস্ট স্বর্গে আরোহণ করলেন, যেন তিনি তাঁর মণ্ডলীর মস্তক হয়ে আবির্ভূত হন,
যাঁর দ্বারা পিতা সমস্ত বিষয়ের উপর কর্তৃত্ব করেন। ৫১। আমাদের মস্তক, খ্রীস্টের এই গৌরব
আমাদের প্রতি কী উপকার করে? উত্তর: প্রথমত, তাঁর পবিত্র
আত্মার দ্বারা তিনি তাঁর সদস্য-সদস্যা আমাদের প্রতি স্বর্গীয় দান (উপহার) ঢেলে দেন; এবং দ্বিতীয়ত, তাঁর
শক্তিতে তিনি সমস্ত শত্রুর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরক্ষা ও সংরক্ষণ করেন। ৫২। খ্রীস্ট যে জীবিত ও মৃতদের
বিচার করতে আসবেন, তা আপনাকে কী সান্ত্বনা দেয়? উত্তর: আমি আমার সমস্ত দুঃখ ও তাড়নায়, আমি মাথা তুলে সেই একই ব্যক্তির প্রতি তাকাই,
যিনি পূর্বে আমার জন্য ঈশ্বরের বিচারালয়ে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন, এবং আমার কাছ থেকে
সমস্ত আভিশাপ দূর করেছেন, যেন স্বর্গ থেকে বিচারক হিসাবে আসতে পারেন; যিনি তাঁর ও আমার সমস্ত
শত্রুকে অনন্ত দণ্ডে নিক্ষেপ করবেন, কিন্তু তাঁর সমস্ত মনোনীতদের সঙ্গে আমাকে তাঁর
সঙ্গে স্বর্গীয় আনন্দ ও গৌরবে গ্রহণ করবেন। শাস্ত্রপাঠ: কলসীয় ১:৯-২০; ইফিষীয় ৪:১-১৬; মথি ২৫:৩১-৪৬ তাঁর সন্তান আমাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার কাজ খ্রীস্ট
পূর্ণ মাত্রায় সম্পূর্ণ
করার কারণে, তিনি পিতার ডান দিকে বসেছেন। পৃথিবীতে যে কাজ করতে পিতা তাঁকে দায়িত্ব
দিয়েছিলেন, তিনি তা সমাপ্ত করেছেন। কিন্তু তিনি আবার সেই সম্মানিত স্থানে বসেছেন, যেহেতু
স্বর্গে ও পৃথিবীতে
সমস্ত ক্ষমতা তাঁকে দেওয়া হয়েছে (মথি ২৮:১৮-২০)। তাই, আমরা আমাদের প্রভু যীশুর বিষয় নিস্ক্রিয়তার কথা
চিন্তা করতে পারি না, অর্থাৎ তিনি হাত-পা গুটিয়ে যে বসে আছেন, এমন নয়। পরিবর্তে
তিনি যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন যেমন সক্রিয় ছিলেন, আজও তিনি একইভাবে সক্রিয় আছেন। এখন তিনি সমগ্র বিশ্বভূমণ্ডলের উপর রাজত্ব
করছেন। তিনি, এই মুহূর্তে, তাঁর সমস্ত শত্রুর পরাজয় আনয়ন করছেন
(১করিন্থীয় ১৫:২৪-২৮)। আর যখন তাঁর এই বর্তমান কাজের
চূড়ান্ত লক্ষ্য, তথা তাঁতে সমস্ত বিষয়ের বশীভূতকরণ, পূর্ণ হবে, তখন আমাদের প্রভু যীশু পৃথিবীতে ফিরে
আসবেন- এমনকী মৃত্যুকে পর্যন্ত ধ্বংস করার পর- পিতার কাছে সমস্ত সমর্পণ
করবেন। যীশু তাঁর সন্তান আমাদের জন্য যে সমস্ত মহান কাজ করছেন, তা যদিও আমাদের
উপলব্ধি করা প্রয়োজন, কিন্তু তা আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। উদাহরণস্বরূপ, তিনি
তাদের বিশ্বস্ত পালক ও
শিক্ষকদের দিয়ে থাকেন (ইফিষীয় ৪:৮-১২)। দম্মেশকের পথে তিনি যেভাবে শৌলের সঙ্গে সাক্ষাত করতে এসেছিলেন
(প্রেরিত ৯:১-৯), তিনি সেইভাবে এই কাজ করেন না। তিনি
তাঁর মানব প্রকৃতিতে আজ মানুষদের
কাছে আবির্ভূত হন না। এখন, তিনি তাঁর লিখিত বাক্যের ক্ষমতায় লোকদের আহ্বান করেন- এবং
বিশেষত, প্রচারিত
বাক্যের দ্বারা- যা পবিত্র আত্মার ক্ষমতায় কার্যকারী হয়ে ওঠে। কিন্তু আমাদের প্রভু
যীশু খ্রীস্টই এই সমস্ত
দান মণ্ডলীকে দিয়ে থাকেন। আর খ্রীস্টই আজ মণ্ডলীকে তাঁর বাক্য ও আত্মায় গেঁথে চলেছেন।
কিন্তু, শেষ পর্যন্ত, একদিন, যখন তাঁর সমস্ত মণ্ডলী সংগৃহিত হবে, তখন তিনি এই গ্রহে ফিরে আসবেন। খ্রীস্টের প্রত্যাবর্তন, যা দ্বিতীয় আগমন নামে আমাদের কাছে বহুল
পরিচিত, কখনও সেইভাবে হবে না, যেভাবে অনেকে কল্পনা করে থাকেন। এমন অনেকে আছেন (আধুনিকতাবাদী), যাঁরা "খ্রীস্টের দ্বিতীয় আাগমন" এই পরিভাষাকে কেবল একটি
প্রতীক
হিসাবে চিন্তা করেন। তাদের প্রতি এর অর্থ হল, যীশুর আদর্শ সকল কেবল শেষ পর্যন্ত বিজয় লাভ করবে,
ফলস্বরূপ পৃথিবী "খ্রীস্ট মতাবলম্বী" হবে। তারা বলে থাকেন, "যখন সমাজ এই আদর্শ পরিস্থিতি লাভ করবে" তখন "তা হবে যীশুর দ্বিতীয় আগমন।" কিন্তু এ কথা কখনও সত্য নয়। সম্পূর্ণ
আক্ষরিক অর্থে, যীশুর দ্বিতীয় আগমন হবে, যেমন ২,০০০ বৎসর পূর্বে তাঁর প্রথম আগমন
হয়েছিল। সেই ঘটনা শ্রদ্ধা
মিশ্রিত ভয় উৎপন্ন করবে, ভূ-পৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে মানুষরা তাদের চোখ দিয়ে
তা দেখবে। তারা যীশুকে দেখতে পাবে, এবং- তারা যদি বিশ্বাসী না হয়- তাদের মধ্যে তারা হঠাৎ মারাত্মক ভয় অনুভব
করবে। তারা উপলব্ধি করবে, এই সমস্ত বিষয়ে বাইবেলে যে সতর্কবাণী করা হয়েছিল, তা
উপহাস করার দ্বারা তারা কী বোকার কাজ করেছে (২পিতর ৩)। তাদের হৃদয় নিমজ্জিত হবে, যখন তারা
উপলব্ধি করবে, অনুগ্রহ ও ক্ষমা পেতে তারা বড্ড দেরি করে ফেলেছে। বাইবেল বলে, "আমাদের সকলকেই খ্রীস্টের
বিচারাসনের সামনে প্রত্যক্ষ হতে হবে, যেন সৎ কাজ হোক, কি অসৎ কাজ হোক, প্রত্যেক জন
নিজের কাজ অনুসারে দেহ দ্বারা উপার্জিত ফল পায়" (২করিন্থীয় ৫:১০)। এর কারণ এই নয় যে, তাদের পরিণাম
অনিশ্চিত। এ বিষয়ে যে তাঁর
মন স্থির করতে এই বিচারের দিনের প্রয়োজন, তা নয়। না, পরিবর্তে, বিচার
দিনের উদ্দেশ্য হল, যে
সিদ্ধান্ত ঈশ্বর পূর্বেই গ্রহণ করেছেন, তার তার সর্ব সমক্ষে উপস্থাপন। তিনি
ইতিমধ্যেই জানেন, কে কে তাঁর। কিন্তু সেই দিনে, সমস্ত মানুষ ও স্বর্গদূত জানতে পারবে ও
দেখতে পাবে, ঈশ্বরের বিচার কতখানি ন্যায্য। আর সেদিন ঈশ্বরের এই
ন্যায়বিচার যিনি সর্ব সমক্ষে উপস্থাপন করবেন, তিনি আমাদের প্রভু যীশু খ্রীস্ট
ছাড়া আর কেউ নন। আমরা সেই দৃশ্যকে একবার কল্পনা করতে পারি। পৃথিবী সৃষ্টির
সময় থেকে যত মানুষ এই পৃথিবীতে বসবাস করেছে, তারা সকলে যীশুর বিচারাসনের সামনে দাঁড়াবে। প্রত্যেকের অনন্তকালীন গন্তব্যস্থলের
বিষয় সর্ব সমক্ষে ঘোষণা
করা হবে। কোনো মুখ সেই
রায়ের প্রতিবাদ করতে পারবে না। যারা বিনষ্ট হতে চলেছে, তাদের কাছে এটা সম্পূর্ণভাবে
পরিষ্কার যে, তাদের জন্য যে অনন্ত শাস্তি নির্ধারিত হয়েছে, তা তারা পাবার যোগ্য। একইভাবে, যারা
উদ্ধার পাবে, তাদের কাছে এ কথা একেবারে পরিষ্কার যে, খ্রীস্টের দ্বারা সাধিত সেই সমাপ্ত কাজ,
যাতে তারা আস্থা রেখেছে, তার দ্বারাই তারা ধার্মিকগণিত হয়েছে, ফলস্বরূপ, তাদের এমন
কোনো পাপ অবশিষ্ট নেই, যার জন্য তাদের শাস্তি পেতে হবে। কেউই জানে না, সেই মহা
ভয়ঙ্কর দিন কবে আসবে। বাস্তব সত্য হল, যীশু যখন এই
পৃথিবীতে ছিলেন, তিনি
নিজেও তা জানতেন না (মার্ক ৩:৩২)। যেহেতু ঈশ্বর তা আমাদের কাছে প্রকাশ করেননি, সেইহেতু আমরা কেউই আত্মতুষ্ট হতে পারি না।
কিন্তু তিনি যে কথা প্রকাশ করেছেন, তা হল, সেই দিন অবশ্যই আসতে চলেছে, তাই, আমাদের
প্রত্যেককে প্রস্তুত
থাকতে হবে। এই সমস্ত বিষয়ের সত্যে দৃঢ় প্রত্যয়ের দ্বারা প্রভুর সন্তানরা চিহ্নিত
হয়ে থাকে। হারিয়ে যাওয়াদের থেকে তারা বুদ্ধিমান হওয়ার কারণে, কিংবা নিজেদের ধার্মিকগণিত
করার জন্য তারা কিছু
করার কারণে যে এই সমস্ত বিষয় দ্বারা তারা প্ররোচিত হয়ে থাকে, তা নয়।
পরিবর্তে, তার একমাত্র কারণ হল, যীশুর বাক্যে ও তাঁর প্রত্যাবর্তনে বিশ্বাস করার দ্বারা তারা যীশুর
সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। আর আমরা যখন এই সত্য বিশ্বাস করে আমাদের প্রাত্যহিক জীবন
যাপন করি, তখন তা কত পার্থক্য তৈরি করে! বাইবেলের কোথাও খ্রীস্টবিশ্বাসীর জীবনকে "গোলাপের শয্যা" বলা হয়নি। কিন্তু তার বিপরীতে যীশু
আমাদের বলেছেন, এই
পৃথিবীতে আমাদের প্রতি ক্লেশ ঘটবে (যোহন ১৬:৩৩)। কিন্তু আমরা যখন খ্রীস্টের সেই মহৎ দিনের প্রতি ও সেই
দিনে যে মহা বিভাজন ঘটতে চলেছে, তার প্রতি আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করি, তখন আমাদের বর্তমান প্রতিকূলতা যে আগামী
গৌরবের তুলনায় কিছুই নয়, তা উপলব্ধি করি। ঈশ্বর আমাদের আশীর্বাদ করুন,
আমরা যেন সেই দিন প্রভুর সঙ্গে অংশ নিতে পারি।