HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 03_QUESTIONS 06~08
2019.06.04 10:40
প্রভুর দিন ৩ হাইডেলবার্গ প্রশ্নোত্তর ৬। প্রশ্ন: তা হলে, ঈশ্বর কি মানুষকে
এমন দুষ্ট ও ভ্রষ্ট করে সৃষ্টি করেছিলেন? উত্তর: কোনোক্রমেই নয়; পরিবর্তে, ঈশ্বর মানুষকে উত্তম করে, এবং
নিজের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছিলেন;
অর্থাৎ, তাঁর সত্য ধার্মিকতায় ও পবিত্রতায় সৃষ্টি
করেছিলেন, যেন সে তার সৃষ্টিকর্তা
ঈশ্বরকে জানতে পারে, অন্তর দিয়ে ভালোবাসতে পারে, এবং তাঁর প্রশংসা ও গৌরব করতে তাঁর সঙ্গে অনন্ত সুখে জীবন যাপন করতে পারে। ৭। প্রশ্ন: তা হলে, কোথা
থেকে মানুষের এই দূষিত প্রকৃতি এল? উত্তর: পরমদেশে, আমাদের প্রথম পিতামাতা, আদম ও হবার পাপে পতন ও
অবাধ্যতা থেকে, যার দ্বারা আমাদের প্রকৃতি
এত দূষিত হয়েছে যে, পাপে আমাদের গর্ভ ও জন্ম হয়েছে। ৮। প্রশ্ন: কিন্তু আমরা কি এত দূষিত যে, কোনও প্রকার উত্তম করতে আমরা সম্পূর্ণ
অক্ষম এবং সমস্ত মন্দের প্রতি আমরা ঝুঁকে আছি? উত্তর: হ্যাঁ, অবশ্যই; যদি না ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা আমরা নতুন
জন্ম লাভ করি। শাস্ত্রপাঠ: আদিপুস্তক ৩:১~৫:৩; গীতসংহিতা ১৪; রোমীয়
১:১৮~৩২ খ্রীস্টবিশ্বাসীদের কাছে ঐতিহাসিক ঘটনা সকল খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। এই সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্যে একটি হল, মানুষের সৃষ্টি। ঈশ্বর
বিশ্বভূমণ্ডল ও অন্য জীবদের সৃষ্টি করেন, তিনি মানুষকেও সৃষ্টি করেন (আদিপুস্তক ১ অধ্যায়)। এরপর, একটা সময় ছিল, তা কতটা
সময় তা যদিও আমাদের বলা হয়নি, যখন এই গ্রহ, তথা পূথিবীতে আদম ও হবা পাপশূন্য জীবন যাপন করে ছিল। সেই সময়ে মানুষের প্রকৃতিতে কোনও
মন্দ বা ভুল ছিল না, যেহেতু তা উত্তম করে সৃষ্টি
করা হয়েছিল। তখন এই পূথিবীতে তাদের জীবন কেমন ছিল, তা কল্পনা
করা, আমাদের পক্ষে সত্যিই খুব কঠিন, যেহেতু এখন সর্বত্র মন্দের ছয়লাপ। কিন্তু আমরা জানি, এই ঘটনা বাস্তবে ঘটেছিল, যেহেতু ঈশ্বর তাঁর বাক্যে তা আমাদের বলেছেন। বাইবেল আমাদের বলে,
আদম ও হবাকে সৃষ্টি করার পর (আদিপুস্তক ১:২৭), “ঈশ্বর
তাঁর সৃষ্ট সমস্ত বস্তু সকলের প্রতি দৃষ্টিপাত
করলেন, আর দেখ, সকলই অতি উত্তম” (আদিপুস্তক ১:৩১)। তা হলে, এমন কী ঘটেছিল, যার কারণে আজ আমাদের এই পৃথিবী এত আলাদা? এর খুব
ভালো উত্তর শলোমন দিয়েছেন, “দেখ, কেবল এটাই জানতে
পেরেছি যে, ঈশ্বর মানুষকে সরল করে সৃষ্টি করেছিলেন, কিন্তু
তারা অনেক কল্পনার (চক্রান্ত, অভিসন্ধি, scheme) অন্বেষণ করেছে” (উপদেশক
৭:২৯)। এ সবের শুরু হয়েছিল অন্য একটি ঘটনার মাধ্যমে, যার বিষয় বাইবেলে লিপিবদ্ধ
করা হয়েছে। তা ছিল, হবা ও আদমের পরীক্ষা এবং শয়তাণের কাছে তাদের বশ্যতা স্বীকার।
এই ঘটনার বৃত্তান্ত আমরা আদিপুস্তক ৩ অধ্যায়ে পাই, এবং তা
ছিল এমন ঘটনা, যা বস্তবে ঘটেছিল। অন্যভাবে বলা যায়, এই কাহিনী বা বৃত্তান্ত
কোনও পৌরাণিক রূপকথা বা প্রতীকী ঘটনা নয়, যেমন
আজ অনেকে মিথ্যা করে তা বলে থাকে। হ্যাঁ, এমন অনেক ঈশতাত্ত্বিক পর্যন্ত আছেন,
যাঁরা এমন কথা বলে থাকেন, ‘আদম’ এই শব্দ কোনও
নিশ্চিত নির্দিষ্ট মানুষকে নির্দেশ করে না, যে ইতিহাসের
শুরুতে এই পৃথিবীতে বসবাস করত। সেই
কাহিনী আপনি যখন পাঠ করেন, তখন আপনি নিজেকে এই কথা বলেন, “হ্যাঁ, তা ব্যক্তি
হিসাবে, আমার নিজের অভিজ্ঞতাকেই বর্ণনা করে।” তাদের কথানুসারে, প্রকৃত
আদম হল, সমস্ত মানুষের অভিজ্ঞতায় যা সাধারণ বিষয় (common)। এখন, এই কথার মধ্যে কিন্তু একটা সত্য বর্তমান। আর তা হল,
আমরা সকলে আদমের ন্যায় (মতো)। কিন্তু আমরা কেন আদমের ন্যায়? কোনও পৌরাণিক রূপকথা কিংবা প্রতীকী ঘটনা কি এই প্রশ্নের উত্তরে
আমাদের সাহায্য করতে পারে? না, অবশ্যই নয়। কিন্তু আমরা এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেতে পারি, আমরা যদি এ বিষয়ে বাইেবেলে যে
বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, তাকে সত্য জ্ঞান করি। আমরা যদি এ কথা
স্বীকার করি যে, আদম ও হবা শুরুতে সত্যি নিখুঁত ছিল, এবং তারপর তারা
ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছিল (আদিপুস্তক ৩ অধ্যায় বলে, তারা অবাধ্য হয়েছিল), আর আমরা
সত্যি তাদের বংশধর হই, তা হলে, আমরা কেন তাদের ন্যায় (মতো)
ও আমরা একে অন্যের ন্যায়, তা উপলব্ধি করতে আমাদের তেমন
অসুবিধা হয় না। একটা আম গাছে যেমন অনেক আম ধরে, আর আম গাছটা
যদি মিষ্টি আমের গাছ হয়, তা হলে, সেই গাছের সমস্ত আমই মিষ্টি
হয়। মানবজাতির প্রতিও এই কথা একইভাবে প্রযোজ্য, আদম ও হবার প্রথম পাপের কারণে
তাদের বংশধর হয়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণকারী সমস্ত মানুষও পাপী।
আমাদের প্রথম পিতামাতার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের কারণে, আমরা তাদের পাপে পতিত প্রকৃতির অংশীদার। তাই, আদম ও হবার পাপে পতনের এই ঐতিহাসিক ঘটনার পরিণাম
হিসাবে, আমাদের প্রকৃতি “বিষাক্ত” ও “গর্ভধারণ
থেকে দূষিত” হয়েছে। সংস্কারপন্থী ঈশতেত্ত্ব, একে সাধারণত ‘সম্পূর্ণ পতনের’
(total depravity) মতবাদ বলা হয়ে থাকে। এই মতবাদ উপলিব্ধ করতে হলে, প্রথমে
আমাদের দুটি বিষয়ে পরিষ্কার ধারণার অধিকারী হতে হবে। প্রথমত, ‘পতন’ কথার
অর্থ, মানব প্রকৃতির হানি বা ক্ষতি (damage) হয়েছে।
আমরা যদি আজকের মানুষকে তার সৃষ্টির সময় সে যা ছিল, তার
সঙ্গে সমান চিন্তা করি, তবে সেই চিন্তা হবে পঁচা আমকে ভালো
আমের সঙ্গে তুলনা করার সমান। দ্বিতীয়ত, ‘সম্পূর্ণ’ কথার দ্বারা তার পতনের
পরিধিকে নির্দেশ করা হয়েছে। আর এখানে আমাদের সতর্ক হতে হবে, কারণ এর দ্বারা আমরা
এই কথা বলি না যে, তার দূষণ এমন মাত্রায় ঘটেছে যে, তার মধ্যে
মানুষ হিসাবে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই- এমন কিছুই অবশিষ্ট নেই যা আমাদের সেই সত্য স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মানুষকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি
করা হয়েছিল। না, তা সত্য নয়। প্রাচীন এথেন্স নগর যেমন আজ
মাটির নিচে ধ্বংসাবশেষ হয়ে আছে, এবং সেই ধ্বংসাবশেষের কিছু
কিছু বিষয় যেমন সেই নগরের পূ্র্বতন
সৌন্দর্য ও গৌরব আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়,
ঠিক তেমনই পাপে পতিত আমাদের প্রকৃতি আদম ও হবার উত্তম প্রকৃতিকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। ‘সম্পূর্ণ’ শব্দের
দ্বারা কেবল যে বিষয়কে নির্দেশ করা
হয়েছে, তা হল, এখন আদমে পাপে পতিত মানুষের মধ্যে এমন কোনও অংশ নেই, যা এই দূষণ থেকে
অব্যাহতি পেয়েছে। শরীর ও আত্মা; মন, হৃদয়
ও ইচ্ছায় সম্পূর্ণ মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই, বাইবেল আমাদের বলে,
ঈশ্বর যদি না তাকে নতুন সৃষ্টি করেন, মানুষের মধ্যে কোনও আশা নেই। এই কারণে, বাইবেল যখন আমাদের পাপে পতিত পরিস্থিতির
আরোগ্যের কথা বলে, তখন খুবই কড়া কথা বা শব্দসমূহ ব্যবহার
করে। যীশু বলেছেন, “তোমাদের নতুন জন্ম হওয়া আবশ্যক” (যোহন ৩:৭)। পৌলেরও
একই চিন্তা মনে ছিল, তখন তিনি এমন কথা বলেছেন, ঈশ্বর “আমাদেরকে, এমনকী,
অপরাধে মৃত আমাদেরকে, খ্রীস্টের সঙ্গে জীবিত করলেন, . . .
খ্রীস্ট যীশুতে আমাদেরকে তাঁর সঙ্গে উঠালেন ও তাঁর সঙ্গে স্বর্গীয় স্থানে বসালেন”
(ইফিষীয় ২:৫~৬)। বাইবেলের শেষ পুস্তকে যোহন
একই অর্থে “প্রথম পুনরুত্থান” বলেছেন
(প্রকাশিত বাক্য ২০:৫; যোহন ৫:২৫)। বাইবেল এমন কড়া
কথাকে ব্যবহার করেছে, কারণ বাইবেল একটি বিষয়ে আমাদেরকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার চিন্তার
অধিকারী হতে বলে, আর তা হল, পাপে পতিত মানুষ আমাদের মধ্যে, আমাদের প্রকৃতিতে, এমন কোনও বিষয় নেই,
যা আমাদের মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে পারে। মানুষকে যদি পরিত্রাণ বা উদ্ধার পেতে হয়, ঈশ্বরের সর্বশক্তিমান ক্ষমতায় এবং অনর্জিত করুণায় তাকে
তা পেতে হবে, আর সেটাই একমাত্র উপায়। কিন্তু সে
বিষয়ে আমরা আরও শিখব, যখন আমরা হাইডেলবার্গ প্রশ্নোত্তরের পরবর্তী অংশ থেকে শিখব।