HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 06_QUESTIONS 16~19
2019.08.01 12:16
প্রভুর দিন ৬ হাইডেলবার্গ প্রশ্নোত্তর ১৬। প্রশ্ন: তাঁকে কেন সত্য ও ধার্মিক মানুষ হতে হবে? উত্তর: কারণ ঈশ্বরের ন্যায়বিচার অনুসারে, যে মানব প্রকৃতি
পাপ করেছে, সেই একই প্রকৃতির দ্বারা পাপের জন্য ক্ষতিপূরণ
দিতে হবে, এবং যেহেতু যে ব্যক্তি নিজে পাপী, সে কখনও অন্যদের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে
পারে না। ১৭। প্রশ্ন: তাঁকে কেন সত্য ঈশ্বরও
হতে হবে? উত্তর: যেন তাঁর ঈশ্বর-প্রকৃতির ক্ষমতার দ্বারা তিনি
তাঁর মানব-প্রকৃতিতে
ঈশ্বরের ক্রোধ বহন করতে পারেন; এবং যেন তিনি আমাদের জন্য ধার্মিকতা ও জীবন অর্জন
করতে পারেন ও আমাদের জন্য তার পুনরুদ্ধার করতে
পারেন। ১৮। প্রশ্ন: কিন্তু এই মধ্যস্থ কে, যিনি একাধারে সত্য ঈশ্বর
এবং সত্য, ধার্মিক মানুষ? উত্তর: আমাদের প্রভু যীশু খ্রীস্ট, যিনি আমাদের জন্য ঈশ্বর থেকে প্রজ্ঞা, ও
ধার্মিকতা ও পবিত্রতা, ও মুক্তি হয়েছেন (১করিন্থীয় ১:৩০)। ১৯। প্রশ্ন: এই সত্য আমরা কোথা থেকে জানতে পারি? উত্তর: পবিত্র সুসমাচার থেকে। যা ঈশ্বর নিজে প্রথমে পরমদেশে প্রকাশ করেছিলেন;
পরবর্তী সময়ে কুলপতি ও ভাববাদীদের দ্বারা ঘোষণা করেছিলেন, বিধানের বিভিন্ন পশুবলি
ও অন্যান্য পর্বের দ্বারা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন; এবং পরিশেষে তাঁর একজাত পুত্রের
দ্বারা পূর্ণ করেছিলেন। শাস্ত্রপাঠ: গীত ১১০; যিশাইয় ৫৩ আমরা, পূর্বের পাঠে দেখেছি, আমাদের যা প্রয়োজন ছিল, তা কেবল একমাত্র সেই
পরিত্রাতা আমাদের জোগান দিতে পারেন, যিনি একাধারে মানুষ ও ঈশ্বর। এই পাঠে, আমরা
এই মহান সত্যের আরও ব্যাখ্যা দেখতে চলেছি। একই সঙ্গে অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও
এখানে পরিষ্কার করা হয়েছে। আর সেই সত্য হল, খ্রীস্টের ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধীয় মতবাদ,
তিনি হলেন দুই প্রকৃতির অধিকারী এক ব্যক্তি, বাস্তবে এই মতবাদ
হল পুরাতন ও নতুন উভয় নিয়মের কেন্দ্রীয় শিক্ষা। আসুন, আমরা আদিপুস্তক থেকে শুরু করি। সাপ আদম ও হবাকে প্রলুব্ধ করার পর, এবং
তাদের পাপে পতনের পর, ঈশ্বর সাপের প্রতি এই ভাববাণী করেছিলেন (এখন, সাপ যেহেতু
নিজে সেই কাজ করেনি, কিন্তু শয়তানের হাতিয়ার হয়ে সেই কাজ করেছিল; সেইহেতু এই কথা
সাপের মাধ্যমে শয়তানের প্রতিও উক্ত হয়েছিল): "আর আমি তোমাতে ও নারীতে,
এবং তোমার বংশ (বীজ) ও তার বংশের (বীজের) মধ্যে পরস্পর শত্রুতা জন্মাব; সে তোমার
মস্তক চূর্ণ করবে, এবং তুমি তার পাদমূল চূর্ণ করবে" (আদি ৩:১৫)।
অবশ্যই, এই বিবৃতির দ্বারা আমাদের প্রথম পিতামাতাকে সমস্ত
বিষয় জানানো হয়নি, যা তারা জানতে ইচ্ছা করেছিল। কিন্তু, তাদের যে মূল বিষয় জানা
প্রয়োজন ছিল, তা তাদের জানানো হয়েছিল। যে বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছিল, তা হল,
ঈশ্বর নিজে সাপের বংশ (বীজ) ও নারীর বংশের (বীজ) মধ্যে শত্রুতা জন্মাবেন। কেবল তাই
নয়, আরও একটি বিষয় এখানে স্পষ্ট, আর তা হল, ঈশ্বর এখানে যে নারীর বংশের (বীজ) কথা
বলেছেন, তিনি এক ব্যক্তি হবেন- পুরুষ হবেন- যিনি এমন শক্তির অধিকারী হবেন যে,
শয়তান তার পাদমূল চূর্ণ করলেও, তিনি শয়তানের মস্তক চূর্ণ করবেন, অর্থাৎ তিনি
শয়তানের অনেক বেশি ক্ষতি সাধন করবেন। এর দ্বারা পরিষ্কারভাবে যে পরিত্রাতাকে
নির্দেশ করা হয়েছে, তিনি একাধারে মানুষ (নারীর বংশ বা বীজ হওয়ায়) এবং মানুষের থেকে
মহত্তর (শয়তানের থেকে বেশি শক্তির অধিকারী হওয়ায়)
ব্যক্তিত্বের অধিকারী হবেন। এর অর্থ, তিনি এক ব্যক্তি হবেন, কিন্তু তাঁর এক
ব্যক্তিত্বে তিনি এই সকল গুণের অধিকারী হবেন এবং তাঁর একক ব্যক্তিত্বে তিনি
শয়তানের কাজ ধ্বংস করবেন। এই প্রাথমিক ধারণাকে ধাপে ধাপে আরও সম্পূর্ণ আকারে পুরাতন নিয়মের অবশিষ্টাংশে মেলে
ধরা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা এই সত্যকে দাউদের গীতে দেখতে পাই, যাঁকে ঈশ্বর তাঁর
চুক্তির প্রজাদের উপর রাজা করেছিলেন। সেই দাউদের প্রতি ঈশ্বর এই প্রতিজ্ঞা
করেছিলেন: "তোমার দিন সম্পূর্ণ হলে, তুমি যখন তোমার
পিতূপুরুষদের সঙ্গে নিদ্রা যাবে, তখন আমি তোমার পরে তোমার বংশকে (বীজকে), যে তোমার ঔরসে জন্মাবে, তাকে স্থাপন করব, এবং তাঁর রাজ্য স্থির
করব। আমার নামের জন্য সে এক গৃহ নির্মাণ করবে, এবং আমি তাঁর
রাজসিংহাসন চিরস্থায়ী করব" (২শমূয়েল ৭:১২~১৩)। ঈশ্বর তাঁর প্রতি এই যে
প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, দাউদ তাঁর কয়েকটি গীতে তা উল্লেখ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, গীত
১১০ অধ্যায়ে, দাউদ লিখেছেন, "সদাপ্রভু আমার প্রভুকে বললেন, তুমি আমার
দক্ষিণে বস, যে পর্যন্ত আমি তোমার শত্রুদেরকে তোমার পাদপীঠ না করি"
(১ পদ)। এই বিবৃতিতে, দাউদ ঈশ্বরের সেই মহান প্রতিজ্ঞার কথা
বলেছেন, যা ঈশ্বর তাঁর প্রতি করেছিলেন। আর তা হল, তাঁর বংশ (বীজ) হয়ে একজন আসতে চলেছেন,
যিনি ভবিষ্যতে এমন রাজত্ব করবেন, যা হবে চিরস্থায়ী। যে বিষয়টি কিন্তু আমাদের অবাক
করে, তা হল, এই বিবৃতিতে, দাউদ তাঁর নিজের পুত্রকে (কিংবা
হিব্রু প্রবাদ অনুসারে, তাঁর বংশধরকে) "প্রভু" বলেছেন! এখন, এটা একটা
অসম্ভব বিষয়। কারণ, সমস্ত স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বংশধরই সর্বদা তার পিতৃপুরুষকে সম্মান জানিয়ে থাকে। তা হলে, দাউদ কেন তাঁর বংশধরকে
প্রভু বলে সম্মান প্রদর্শন করেছেন? আর এটা হল সেই একই প্রশ্ন, যা যীশু ইহুদিদের
করেছিলেন। এই শাস্ত্রাংশ উদ্ধৃত করার পর, যীশু ইহুদিদের এই
প্রশ্ন করেছিলেন, "দাউদ যখন তাঁকে প্রভু বলেন, তিনি কী প্রকারে তাঁর
সন্তান? (মথি ২২:৪৫)। অবশ্যই, এর উত্তর হল, যীশু তাঁর মানব প্রকৃতিতে দাউদের বংশধর। কিন্তু একইসঙ্গে, তিনি দাউদের থেকে মহত্তর
ব্যক্তি, যেহেতু তিনি একাধারে ঈশ্বর। অর্থাৎ, আমরা দেখতে পাচ্ছি, পূর্বেই পুরাতন
নিয়মে এই দুটি বিষয় একসঙ্গে অবস্থান করেছে: তাঁকে একজন
পরিত্রাতা বা মশীহ হতে হবে, কিন্তু তাঁকে একাধারে ঈশ্বর ও মানুষ হতে হবে। পুরাতন
নিয়মের লেখকরা তাঁর সম্বন্ধে কখনও কখনও তিনি যে মানুষ হবেন,
এ বিষয়ের উপর তাঁরা জোর দিয়েছেন। আবার অন্য ক্ষেত্রে তাঁর ঈশ্বর প্রকৃতির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুরাতন
নিয়মে ধারাবাহিকভাবে যে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, তা হল, সেই মহান পরিত্রাতা হবেন
একাধারে মানুষ ও ঈশ্বর। মানুষের পাপে পতনের ঠিক পরে, ঈশ্বরই পাপীদের জন্য সর্বপ্রথম বলি উৎসর্গ
করেছিলেন। আদিপুস্তক ৩:২১ পদে, আমরা এ বিষয়ের ইঙ্গিত পাই, যেখানে বলা হয়েছে, "আর
সদাপ্রভু ঈশ্বর আদম ও তাঁর স্ত্রীর জন্য চামড়ার পোষাক
প্রস্তুত করে তাদের পরালেন।" এর পর থেকে ঈশ্বর-বিশ্বাসী লোকেরা সর্বদা পশুবলির মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে উপস্থিত হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, আদিপুস্তক ৪ অধ্যায়ে আমরা আদমের পুত্র কয়িন ও হেবলের কথা পাই। সেখানে বলা হয়েছে, "হেবলও তার পালের প্রথমজাত কয়েকটি
পশু ও তাদের মেদ উৎসগ করল। তখন সদাপ্রভু হেবলকে ও তার উপহার গ্রহণ করলেন; কিন্তু
কয়িনকে ও তার উপহার গ্রাহ্য করলেন না" (৪~৫ পদ)। আর ঈশ্বরের এই কাজের
পিছনে, যে কারণের কথা শাস্ত্র উল্লেখ করা হয়েছে, তা হল, "বিশ্বাসে হেবল
ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কয়িনের থেকে শ্রেষ্ঠ বলি উৎসর্গ করল"
(ইব্রীয় ১১:৪)। হেবলের বলি উৎকৃষ্টতর ছিল, কারণ হেবল সজীব
প্রাণীকে- নিষ্পাপ সৃষ্টিকে- রক্তসেচনের মাধ্যমে মৃত্যুর দ্বারা উৎসর্গ করেছিল। এটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ "রক্তসেচন
ব্যতীত পাপের মোচন (পাপক্ষমা) হয় না" (ইব্রীয় ৯:২২)। পুরাতন নিয়মের অবশিষ্টাংশে, এই ধারণার আরও গভীরতর আকারকে আমরা দেখতে পাই।
উদাহরণস্বরূপ, মোশীর বিধান, যা পরে এসেছিল, তাতে আমরা দেখতে পাই, ঈশ্বর তাঁর
প্রজাদের কাছ থেকে যে পশুবলি গ্রহণ করবেন, তার বিস্তৃত
বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে এ বিষয়ে কেন এত বেশি উল্লেখ
করা হয়েছে? অনেক কারণকে আমরা নির্দেশ করতে পারি। কিন্তু প্রধান কারণ হল, এর দ্বারা
সেই সত্য পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, পাপের ক্ষতিপূরণ
সামান্য নয়, মস্ত বড়ো। হ্যাঁ, সেই ক্ষতিপূরণ এত বড়ো ছিল যে, প্রচুর পরিমাণ রক্ত,
পশুর রক্ত, সেই ক্ষতিপূরণ দিতে যথেষ্ট ছিল না। তাই, যিশাইয় ভাববাদী, এই পশুবলির
কথা মাথায় রেখে, আগামী পরিত্রাতার কথা বলতে গিয়ে, পশুবলির কথা উল্লেখ করেছেন
(যিশাইয় ৫৩ অধ্যায়)। আর এর মাধ্যমে, ঈশ্বর যে বিষয় পরিষ্কার করে বর্ণনা করেছেন, তা
হল, আমাদের পাপের চূড়ান্ত প্রায়শ্চিত্ত নারীর বংশের দ্বারা সাধিত হবে! "সত্য আমাদের যাতনা সকল তিনিই তুলে নিয়েছেন, আমাদের ব্যথা সকল তিনি বহন
করেছেন; তবু আমরা মনে করলাম, তিনি আহত, ঈশ্বর কর্তূক প্রহারিত ও দুঃখার্ত। কিন্তু
তিনি আমাদের অধর্মের কারণে বিদ্ধ, আমাদের অপরাধের কারণে চূর্ণ হলেন; আমাদের
শান্তিজনক শাস্তি তার উপরে বর্তান হল, এবং তাঁর ক্ষত সকল দ্বারা আমাদের আরোগ্য
হল। . . . তবুও তাঁকে চূর্ণ করতে সদাপ্রভুরই মনোরথ ছিল; তিনি তাঁকে যাতনাগ্রস্ত
করলেন, তাঁর প্রাণ যখন দোষার্থক বলি উৎসর্গ করবে, তখন তিনি নিজের বংশ দেখবেন, দীর্ঘায়ু হবেন, এবং তাঁর হাতে সদাপ্রভুর মনোরথ সিদ্ধ
হবে" (যিশাইয় ৫৩:৪, ৫, ১০) পুরাতন নিয়মে এ বিষয়টি ইতিপূর্বে পরিষ্কার ছিল যে, মানুষের
পাপের জন্য পশুবলি কখনও যথেষ্ট ছিল না। তার থেকে উত্তমতর কিছুর প্রয়োজন ছিল।
প্রয়োজন ছিল ঈশ-মানব পরিত্রাতার। মুক্তিদাতাকে পাঠিয়ে, ঈশ্বর তাঁর সেই মহান প্রতিজ্ঞা
কীভাবে পূর্ণ করেছেন, তার সাক্ষ্য হল নতুন নিয়ম। যীশু খ্রীস্টের ব্যক্তিত্ব ও
কাজে, যখন সেই নিখুঁত ও চূড়ান্ত বলি উৎসর্গীকৃত হয়েছিল, তখন
ঈশ্বরের সন্তানরা মুক্তি পেয়েছিল- ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ধার্মিক
প্রতিপন্ন হয়েছিল। যেহেতু স্বয়ং ঈশ্বর আমাদের বলেছেন, "যীশু খ্রীস্টের দেহ
একবার উৎসর্গকরণ দ্বারা, আমরা পবিত্রীকৃত হয়ে আছি। . . .
কারণ যারা পবিত্রীকৃত হয়, তাদের তিনি একই নৈবেদ্য দ্বারা
চিরকালের জন্য সিদ্ধ করেছেন" (ইব্রীয় ১০:১০, ১৪)।