메뉴 건너뛰기

Grace Xn Library

প্রভুর দিন ১০

হাইডেলবার্গ প্রশ্নোত্তর

২৭। প্রশ্ন: ঈশ্বরের সদয় তত্ত্বাবধান [providence of God] কথার অর্থ কী?

উত্তর: সর্বশক্তিমান ও সর্বত্র বিরাজমান ঈশ্বরের ক্ষমতার হাত দ্বারা, তিনি যেমন তাদের সৃষ্টি করেছিলেন, ঠিক একইভাবে স্বর্গ, পৃথিবী এবং সমস্ত সৃষ্টিকে তিনি ধারণ করে আছেন (টিকিয়ে রেখেছেন), এবং তিনি তাদের উপর এমন নিয়ন্ত্রণ চালান যে, শাক-পাতা ও ঘাস, বৃষ্টি ও খরা, ফলবান ও নিষ্ফল বৎসর, খাদ্য ও পানীয়, সুস্থতা ও অসুস্থতা, ধন ও দারিদ্র, ইত্যাদি সমস্ত বিষয়, দুর্ঘটনা হিসাবে নয়, কিন্তু তাঁর পিতৃসম হাত থেকে এসে থাকে।

২৮। প্রশ্ন: ঈশ্বর সমস্ত বিষয় সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর সদয় তত্ত্বাবধান দ্বারা তিনি তাদের ধারণ করে আছেন (টিকিয়ে রেখেছেন), এই সত্য জানার মাধ্যমে আমরা কী উপকার লাভ করি?  

উত্তর: দুঃখ-দুর্দশার সময় আমরা ধৈর্য ধরতে পারি, সমৃদ্ধির সময় কৃতজ্ঞ হতে পারি, এবং ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে সেই চিন্তার অধিকারী হতে পারি যে, আমাদের বিশ্বস্ত ঈশ্বর ও পিতায় আমরা এই দৃঢ় আস্থা রাখতে পারি যে, সৃষ্টির কোনো বিষয়ই তাঁর প্রেম থেকে আমাদের পৃথক করতে পারবে না, যেহেতু সমস্ত সৃষ্টি তাঁর হাতে এমনভাবে আছে যে, তাঁর ইচ্ছা ছাড়া তারা কিছুই করতে পারে না।

শাস্ত্রপাঠ:

২বিবরণ ২৮; আদি ৩৭; ৩৯-৪৬; ৫০:১৫-২১; রোমীয় ৮:২৮

ঈশ্বরের সদয় তত্ত্বাবধানের অর্থ কী? এ হল দুটি বিষয়। প্রথমত, এ হল, ঈশ্বরের দ্বারা বিশ্বভূমণ্ডলের (সামগ্রিক অর্থে, এমনকী এর ক্ষুদ্রতম অংশ অর্থে) সংরক্ষণ ও ধারণ করা (টিকিয়ে রাখা)। আর দ্বিতীয়ত, বিশ্বভূমণ্ডলের উপর ঈশ্বরের নিয়ন্ত্রণ বা কর্তৃত্বকরণ, যেন সমস্ত বিষয় এমনভাবে একসঙ্গে কাজ করে যে, শুরুতে ঈশ্বর যে লক্ষ্য নিরূপণ করেছেন, তা পূর্ণ হয়।

এই দুটি বিষয়ই পরিষ্কারভাবে বাইবেলে প্রকাশিত হয়েছে। ইব্রীয় ১:৩ পদে, বলা হয়েছে, ঈশ্বর তাঁর "পরাক্রমের বাক্যে সমস্ত বিষয়ের ধারণকর্তা।"  কলসীয় ১:১৭ পদে আরও বলা হয়েছে, "তাঁতেই [অর্থাৎ, খ্রীস্টে] সকলের স্থিতি হচ্ছে।"  এই ধরণের শাস্ত্রাংশ থেকে আমরা পরিষ্কার দেখতে পাই, আস্তিক্যবাদীরা বা একাত্ববাদীরা [Deist] [ঈশ্বরের প্রকাশ বা ধর্মীয় বধিবিধানে আস্থা ছাড়াই, যারা এক পরমসত্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে] যখন ঈশ্বর ও বিশ্বভূমণ্ডলকে ঘড়িনির্মাতা ও ঘড়ির সঙ্গে তুলনা করেন, তখন তারা কত ভুল করেন। ঘড়িনির্মাতা যখন একটি ঘড়ি তৈরির কাজ শেষ করেন, তখন সেই ঘড়ির প্রতি তাঁর আর কিছু করার থাকে না (যদি না তাতে সমস্যা তৈরি হয় ও সারাবার প্রয়োজন হয়)। কিন্তু ঈশ্বর ও বিশ্বভূমণ্ডলের মধ্যে সম্পর্কে এই কথা সত্য নয়। ঈশ্বর নিজে নিজে তাঁর অস্তিত্ব রক্ষা করে থাকেন। বিশ্বভূমণ্ডল কিন্তু তা করতে পারে না। বিশ্বভূমণ্ডলকে টিকে থাকতে হলে, তাকে ঈশ্বরেরর পরাক্রমের বাক্যের উপর নির্ভর করতে হয়।

এই কারণে, পৌল ঈশ্বরের বিষয় একজন অইহুদি কবির কথাকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, "তাঁতেই আমরা বেঁচে আছি, চলাফেরা করছি, ও আমাদের অস্তিত্ব রক্ষা করছি" (প্রেরিত ১৭:২৮)।

কিন্তু ঈশ্বরে আমাদের "জীবন, গতি ও সত্তা" এই কথার অর্থকে যেন আমরা সর্বেশ্বরবাদের [Pantheism] সঙ্গে গুলিয়ে না ফেলি। সর্বেশ্বরবাদ যে শিক্ষা দেয়, তা হল, মানুষ, প্রকৃতি ও বস্তজগতের বাস্তবতা হল, ঈশ্বরেরই বিভিন্ন আকার মাত্র। এক কথায়, সমস্ত বিষয়ের সমষ্টি হল ঈশ্বর। কিন্তু বাইবেলের শিক্ষানুসারে, এ বিষয়ে খ্রীস্টীয় দৃষ্টিকোন হল, পৃথিবীতে ঈশ্বর যদিও বর্তমান, কিন্তু তিনি তা থেকে পৃথক (আলাদা)। তা থেকে পৃথক বিষয় হিসাবে তিনি পৃথিবীকে টিকিয়ে রেখেছেন। আর পৃথিবীর উপর তাঁর সার্বভৌমত্ব এতখানি সম্পূর্ণ যে, তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে কিছুই অবস্থান করে না। যীশু নিজে বলেছেন, ঈশ্বরের অনুমতি ছাড়া একটি চড়াই পাখিও মাটিতে পড়ে না (মথি ১০:২৯)।

একটি ঘটনার কথা আমরা জানি, একজন সৈন্য এলোমেলোভাবে তীর ছুড়েছিল, আর তার দ্বারা একজন মানুষ মারা গিয়েছিল। এখন, প্রশ্ন হল, ঈশ্বরের দৃষ্টিকোন থেকে এই ঘটনা কি কোনো দুর্ঘটনা ছিল? না, প্রভুর ভাববাদীর দ্বারা ইতিমধ্যেই সেই মানুষের মৃত্যুর কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। তাই, বাস্তব হল, যা কিছু ঘটেছে, তাদের সকল বিষয়ের উপর ঈশ্বরই নিয়ন্ত্রণ চালিয়েছেন (১রাজা ২২:২৮, ৩৪)। আমাদের কাছে যা কোনো কারণ ছাড়া, বিশুদ্ধ দৈবাৎ ঘটনা বলে মনে হয়, তা কিন্তু আসলে ঈশ্বরের কর্তৃত্বের অধীনেই সাধিত হয়ে থাকে (হিতোপদেশ ১৬:৩৩)। আর একইভাবে, প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তির প্রতিও এই কথা প্রযোজ্য। আজকের দিনে, বাস্তব্যবিদ্যা [ecology, পরিবেশের সঙ্গে প্রাণীজগতের সম্পর্ক সম্বন্ধীয় বিদ্যা] সম্বন্ধে বিশেষ আগ্রহ দেখতে পাওয়া যায়। অবিশ্বাসীদের চিন্তানুসারে, আজ আমাদের বিভিন্ন সমস্যার কারণ হিসাবে, প্রকৃতির ভারসাম্য লঙ্ঘনকে নির্দেশ করা হয়। এই আধুনিক চিন্তার মধ্যে কোনো সত্যই নেই, এই কথা বলা আমাদের অভিপ্রায় নয়। কিন্তু যে বিষয়ের উপর আমরা জোর দিতে চাই, তা হল, এর দ্বারা আমরা আসলে প্রধান বিষয়কে এড়িয়ে যাচ্ছি। বাইবেলের শিক্ষানুসারে, প্রধান বিষয় হল, ঈশ্বরই পৃথিবীর একোলজি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। মানুষ যখন ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তখন ঈশ্বরই মানুষের বিরুদ্ধে বিভন্ন ঘটনা ঘটতে অনুমতি দিয়ে থাকেন (২বিবরণ ২৮ অধ্যায়)। অন্যদিকে, মানুষ যখন ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসে, তখন তিনি তার প্রতি প্রকৃতির প্রচুর আশীর্বাদ দান করেন (হোশেয় ২:২১-২২)। এই কারণে, ত্রাণসাহায্যের সময় মানুষের ধর্মীয় অধঃপতনকে আমাদের স্মরণে রাখতে হবে। সত্য ঈশ্বরের পরিবর্তে যতদিন অন্য বিষয়কে পবিত্র বলে আরাধ্য পাত্র করা হবে, ততকাল আমাদের পরিস্থিতর দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন (বিকাশ) আশা করা কঠিন।

একজন খ্রীস্টবিশ্বাসীর কাছে এটা খুবই সান্ত্বনার বিষয় যে, সে যে সমস্যা ও বিপদসঙ্কুল পৃথিবীতে বাস করে, তাতে ঈশ্বর তাঁর সৃষ্ট সমস্ত বিষয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব চালিয়ে চলেছেন। হতে পারে, ঈশ্বর এই পৃথিবীর উপর মহাবিপর্যয় আনতে চলেছেন। তিনিই যাকোবের পুত্র যোষেফের সময় সেই মহা দুর্ভিক্ষকে অনুমতি দিয়েছিলেন। আমরা সকলেই যোষেফের সেই কাহিনীর কথা জানি, যার দাদারা তাকে ঘৃণা করে মিশরে কৃতদাস হিসাবে বিক্রি করেছিল, কিন্তু শেষে যোষেফ মিশর দেশে ফরৌণের পরবর্তী ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি হয়েছিল (আদি ৩৭:৩৯-৪৬)। এর মধ্যে যে বিষয় দেখে আমরা সবথেকে বড়ো সান্ত্বনা পাই, তা হল, সেই সমস্ত ঘটনার উপর ঈশ্বরই নিয়ন্ত্রণ চালিয়েছিলেন। অনেক সময়, তাঁর সেই নিয়ন্ত্রণকে উপলব্ধি করা খুব কঠিন বলে মনে হয়, যেমন যোষেফ বা তার পিতা যাকোবের পক্ষে তা উপলব্ধি করা খুব কঠিন ছিল। কিন্তু, তাদের কঠিন পরিস্থিতর মধ্যেও ঈশ্বরের নিয়ন্ত্রণ ছিল অটুট। আর অনেক পরে, শেষে, তারা ঈশ্বরের সেই নিয়ন্ত্রণকে দেখতে পেয়েছিল (আদি ৪৮:৫; ৫০:২০)।

প্রেরিত পৌল আমাদের বলেছেন, "যারা ঈশ্বরকে ভালোবাসে, যারা তাঁর পরিকল্পনা অনুসারে আহূত, তাদের পক্ষে সকলই মঙ্গলের জন্য একসঙ্গে কাজ করছে" (রোমীয় ৮:২৮)। তাই, আমরা জানি, যোষেফের জীবনে যা সত্য ছিল, যাকোবের জীবনে যা সত্য ছিল, তা প্রত্যেক বিশ্বাসীর জীবনে সত্য। তাই, যখন বিভিন্ন বিষয় আমাদের বিপক্ষে ঘটছে বলে মনে হয়, আমরা স্মরণ করব, সেই সমস্ত মহৎ বিষয়, যা ঈশ্বর তাদের জীবনে সাধন করেছিলেন, যখন তারা তা দেখতে পায়নি, এবং তার মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতাতে পূর্ণ আস্থা রাখতে পার। ঈশ্বরের প্রজা বা সন্তান হিসাবে বিভিন্ন সান্ত্বনার মধ্যে এটি হল, একটি অন্যতম প্রধান সান্ত্বনা।

번호 제목 글쓴이 날짜 조회 수
19 HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 19_QUESTIONS 50~52 Sujoy 2020.03.12 3465
18 HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 18_QUESTIONS 46~49 Sujoy 2020.03.12 507
17 HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 17_QUESTIONS 45 Sujoy 2020.03.12 511
16 HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 16_QUESTIONS 40~44 Sujoy 2020.03.12 623
15 HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 15_QUESTIONS 37~39 Sujoy 2019.10.16 920
14 HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 14_QUESTIONS 35~36 Sujoy 2019.10.16 1387
13 HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 13_QUESTIONS 33~34 Sujoy 2019.10.16 613
12 HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 12_QUESTIONS 29~31~32 Sujoy 2019.10.16 2532
11 HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 11_QUESTIONS 29~30~28 Sujoy 2019.10.16 1815
» HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 10_QUESTIONS 27~28 Sujoy 2019.10.16 1376
9 HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 09_QUESTIONS 26 Sujoy 2019.10.16 635
8 HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 08_QUESTIONS 24~25 Sujoy 2019.08.01 2594
7 HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 07_QUESTIONS 20~23 Sujoy 2019.08.01 3295
6 HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 06_QUESTIONS 16~19 Sujoy 2019.08.01 643
5 HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 05_QUESTIONS 12~15 Sujoy 2019.06.20 1097
4 HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 04_QUESTIONS 09~11 Sujoy 2019.06.12 843
3 HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 03_QUESTIONS 06~08 Sujoy 2019.06.04 119402
2 HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 02_QUESTIONS 03~05 Sujoy 2019.05.28 612
1 HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 01_QUESTIONS 01~02 Sujoy 2019.05.26 501