HEIDELBERG CATECHISM_LORD'S DAY NO. 13_QUESTIONS 33~34
2019.10.16 15:34
প্রভুর দিন ১৩ হাইডেলবার্গ প্রশ্নোত্তর ৩৩। প্রশ্ন: তাঁকে কেন একজাত পুত্র বলা হয়, কারণ আমরাও
তো ঈশ্বরের সন্তান? উত্তর: যেহেতু একমাত্র খ্রীস্টই হলেন ঈশ্বরের অনন্ত, প্রকৃত (natural) পুত্র; কিন্তু আমরা
হলাম খ্রীস্টের কারণে, অনুগ্রহের মাধ্যমে, দত্তকতার দ্বারা ঈশ্বরের সন্তান। ৩৪। প্রশ্ন: তাঁকে আপনি কেন আমাদের প্রভু বলেন? উত্তর: যেহেতু তিনি সোনা
বা রূপার দ্বারা নয়, কিন্তু তাঁর বহুমূল্য রক্ত দ্বারা, আমাদের সমস্ত পাপ থেকে, আমাদের শরীর ও আত্মাকে, মুক্ত করেছেন, এবং দিয়াবলের সমস্ত
ক্ষমতা থেকে তিনি আমাদের উদ্ধার করেছেন, এবং তাঁর নিজের অধিকার করেছেন। শাস্ত্রপাঠ: যিশাইয় ৭:১০-১৪; ৯:১-৭; ইব্রীয় ২:৫-১৮ নতুন বিশ্বাসীরা যখন এই
কথা শোনে যে, যীশু খ্রীস্ট হলেন ঈশ্বরের একজাত পুত্র, এবং আরও শোনে যে, তারাও
ঈশ্বরের সন্তান, তখন তারা বিভ্রান্ত হয়। তাদেরকে যে সত্য উপলব্ধি করতে হবে, তা হল,
সন্তান দুই ধরণের সন্তান হয়! একটি পরিবারে সন্তানরা তাদের পিতামাতাদের দ্বারা জন্মগ্রহণের দ্বারা যেমন
সন্তান হতে পারে, তেমনই সেই পিতামাতা আবার তাদের দত্তক গ্রহণ করে থাকতে পারেন। অনেক
সময় আবার, এ-ও দেখা যায়, কোনো দম্পতি এক কি দুইজন সন্তানকে দত্তক গ্রহণ করেছেন, এবং
একইসঙ্গে তারা এক কি দুইজন সন্তানের জন্মদাতা পিতামাতা। এই দত্তকগ্রহণ হল একটি
সুন্দর বিষয়। কারণ, একটি শিশু, যে কিছুরই আধিকারী ছিল না, সে হঠাৎ 'সমস্ত বিষয়ের' অধিকারী হয়ে ওঠে- একটি পরিবার, নিরাপত্তা, সেই পরিবারে
জন্মগ্রহণকারী অন্য সন্তানদের ন্যায় সমান আইনসম্মত আধিকার। তবুও, দত্তকপুত্ররা
সর্বদা এই সত্য উপলব্ধি করে না! লেখক এমন একজনকে জানেন, যিনি ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়
উপলব্ধি করেন যে, তাকে দত্তকগ্রহণ করা হয়েছিল। (প্রসঙ্গক্রমে, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস
হল, পিতামাতারা যেন কখনও তাদের দত্তক সন্তানদের কাছে এই তথ্য লুকিয়ে না রাখেন)। যাইহোক,
যখন তিনি জানতে পারলেন যে, তাঁকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল, তখন তিনি তাঁর শারীরিক
পিতামাতার খোঁজ করার ইচ্ছায় মগ্ন হলেন। কিন্তু যখন তিনি তাঁর শারীরিক পিতামাতার
খোঁজ পেলেন, তখন একটি অবাক করা ঘটনা ঘটল। তিনি তখন উপলব্ধি করলেন, তাঁর জীবনে তাঁর
'প্রকৃত' পিতামাতারা যে অর্থ বহন করে,
তাদের থেকে তাঁকে যাঁরা দত্তকগ্রহণ করেছিলেন, সেই পিতামাতারা অনেক বেশি অর্থ বহন
করেন! এর আগে তিনি যা কখনও উপলব্ধি করেননি, তা তিনি সেদিন উপলব্ধি করলেন, আর তা
হল, তিনি তাঁদের কাছে কতখানি ঋণী, এবং তাঁকে যাঁরা পরিত্যাগ করেছিলেন সেই দুইজনের
তুলনায়, তিনি তাঁদের সহস্র গুণ ভালোবাসলেন। এখন, স্বর্গস্থ পিতার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেকটাই এর ন্যায়। যীশু খ্রীস্ট
হলেন ঈশ্বরের একজাত পুত্র। আমরা এমন কথা বলতে পারি, তিনি ঈশ্বরের একমাত্র 'প্রকৃত' পুত্র ছিলেন এবং আছেন। অন্যদিকে,
আমরা হলাম আদমের 'প্রকৃত' সন্তান। আমরা সেই সমস্ত পিতামাতা
থেকে এসেছি, যাঁরা আদমের বংশধর। যেহেতু আদম পাপে পতিত হয়েছিল এবং শয়তানের প্রভুত্ব
স্বীকার করেছিল, সেই কারণে, এক অর্থে আমরা স্বীকার করতে বাধ্য যে, শয়তান আমাদের
প্রকৃত পিতা (যোহন ৮:৪৪)। কিন্তু সুসমাচারে বিশ্বাস করতে, পবিত্র আত্মার
ক্ষমতার দ্বারা, যখন আমাদের স্বর্গীয় পিতার কাছে আনা হয়, তখন কী হয়? যখন আমরা অনুতাপ ও বিশ্বাস করি, তখন কী হয়? এখন, বাইবেল আমাদের যে শিক্ষা দেয়, তা হল, তখন ঈশ্বর
আমাদেরকে তাঁর দত্তক সন্তান হিসাবে গ্রহণ করেন। তিনি আমাদেরকে তাঁর পরিবারের অংশ
বা সদস্য-সদস্যা করেন। আমরা ঈশ্বরের উত্তরাধিকারী হই এবং তিনি খ্রীস্টকে যে সমস্ত
বিষয় দিয়েছেন, আমরা খ্রীস্টের সঙ্গে সেই সমস্ত বিষয়ে সহ-দায়াদ (সহ-উত্তরাধিকারী)
হই (রোমীয় ৮:১৭)। এই সমস্ত বিষয় থেকে, প্রথমত আমরা যে শিক্ষা লাভ করি, তা হল, প্রভু
যীশু হলেন স্বয়ং ঈশ্বর। আমরা উপলব্ধি করি, তিনি ঈশ্বর থেকে কোনোভাবে কম নন।
আর এই সত্য খুবই স্বাভাবিক, যেহেতু ঈশ্বর অসীম, অনন্ত, ও অপরিবর্তনশীল। এ কথা যদি
সত্য হয়, তা হলে, পিতা ঈশ্বর সর্বদাই পিতা ছিলেন। আর তিনি কীভাবে অনন্তকাল ধরে
পিতা হতে পারেন, যদি না তাঁর পুত্রও অনন্ত হন? আর এই দিক থেকে, খ্রীস্ট যে অর্থে ঈশ্বরের পুত্র, সেই অর্থে আমরা কখনও ঈশ্বরের
পুত্র-কন্যা হতে পারি না। আমরা ঈশ্বরের সন্তান হয়েছি, যেহেতু ঈশ্বর আমাদের প্রতি
করুণা করেছেন, আমাদের মনোনিত করেছেন, এবং আমাদের দত্তক গ্রহণ করেছেন। কিন্তু যীশু
খ্রীস্টর ক্ষেত্রে এ ছিল জন্মাধিকার। অনন্ত থেকে, এমন কোনো সময় ছিল না, যখন যীশু
জাত হননি (জন্মগ্রহণ করেননি)। আমরা সকলেই সময়ের মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুতে
জন্মগ্রহণ করেছি। আমাদের সকলেরই একটা শুরু আছে। কিন্তু আমরা যখন ঈশ্বরের একজাত
পুত্র যীশুর বিষয় বলি, তখন এ কথা আমরা চিন্তা পর্যন্ত করতে পারি না। ঈশতাত্ত্বিকরা অনেক সময় খ্রীস্টের অনন্তকালীন জন্মের অর্থ কী, তা ব্যাখ্যা
করতে চেষ্টা করেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন হিসাবে, আমরা যোনাথন এডওয়ার্ডের নাম করতে পারি।
তিনি বিষয়টিকে এইভাবে বর্ণনা করেছিলেন: পিতা ঈশ্বর অসীম, অনন্ত, ও
অপরিবর্তনশীল হওয়ায়, তিনি তাঁর নিজের বিষয় অসীম, অনন্ত, ও অপরিবর্তনশীল 'ধারণার' (idea) অধিকারী ছিলেন। আর তাঁর নিজের বিষয় এই অসীম, অনন্ত, ও
অপিরবর্তনশীল ধারণাই ছিল 'বাক্য' (the Word)। আর বাইবেল আমাদের বলে, "আদিতে বাক্য ছিলেন, বাক্য ঈশ্বরের কাছে ছিলেন, এবং বাক্য
ঈশ্বর ছিলেন" (যোহন ১:১)। এখন, পিতা ঈশ্বর তাঁর "অনন্ত বাক্যকে" (তাঁর একজাত পুত্রকে) যে প্রেমে
প্রেম করতেন, সেই প্রেম ছিল অসীম, অনন্ত, ও অপরিবর্তনশীল। আর একইভাবে, এই প্রেম
তাঁর একজাত পুত্রের কাছ থেকে পিতা ঈশ্বরের কাছে ফিরে এসেছিল। এরপর, এডওয়ার্ড এমন
কথা বলেছেন, এই অসীম, অনন্ত, ও অপরিবর্তনশীল প্রেমই হলেন পবিত্র আত্মা (কারণ,
বাইবেল এমন কথা বলে, ঈশ্বর প্রেম)। এখন, আমাদের যে প্রশ্ন করতে হবে,
তা হল, এমন অনুমান (speculation) উপকারী না ক্ষতিকারক। আসলে, আমরা
জানি না, যেহেতু পিতা ঈশ্বরের দ্বারা খ্রীস্ট কীভাবে অনন্তকালীন জাত হয়েছিলেন, তা
ঈশ্বর আমাদের কাছে প্রকাশ করেননি। কিন্তু যা আমরা নিশ্চিতরূপে জানি, তা হল, ঈশ্বর-অনুপ্রাণিত
শাস্ত্রবাক্য পরিষ্কারভাবে আমাদের বলে, খ্রীস্ট হলেন ঈশ্বরের একজাত পুত্র।
পিতা ঈশ্বর তাঁকে অনন্তকালীন জন্মদানের (জাত হওয়ার) দ্বারা খ্রীস্টকে ঐশ্বরিক
প্রকৃতি দিয়েছেন। একইসঙ্গে, একথা বলা খুবই জরুরি যে, আমরা যখন খ্রীস্টকে ঈশ্বরের একজাত পুত্র হিসাবে
বর্ণনা করছি, তখন আমরা মানুষ হিসাবে তাঁর জন্ম বা গর্ভস্থ হওয়াকে নির্দেশ করছি
না। পরবর্তী অধ্যায়গুলিতে আমরা দেখতে চলেছি, মানুষ হিসাবে তাঁর জন্মেও খ্রীস্ট
আমাদের থেকে অনেক আলাদা ছিলেন। একমাত্র তিনিই এক কুমারীর গর্ভে গর্ভস্থ হয়েছিলেন, এবং
মানুষ পিতা ছাড়াই তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু এই অধ্যায়ে, আমরা যে সত্য
উপলব্ধি করছি, তা হল, মানুষ হবার আগে আমাদের প্রভু ঈশ্বর ছিলেন (এই শব্দের সম্ভাব্য
সর্বোচ্চ অর্থে)। আমরা তাঁকে প্রভু বলি- এই প্রশ্নোত্তরে যেমন বলা হয়েছে- যেহেতু
তিনি আমাদের মুক্তিদাতা। তাঁর বহুমূল্য রক্ত দিয়ে তিনি আমাদের ক্রয় করেছেন, যেন
আমরা তাঁর পিতার দত্তক পুত্র-কন্যা হতে পারি। কিন্তু আমরা যখন তাঁকে আমাদের 'প্রভু' বলি, বাইবেলে যে অর্থে এই শব্দ
ব্যবহার করা হয়েছে, তখন আমরা তাঁর ঈশ্বর প্রকৃতিকে স্বীকার করি। পুরাতন নিয়মে,
ঈশ্বর তাঁর চুক্তির প্রজাদের কাছে, নিজেকে ইয়াওয়ে (যিহোবা)
নামে পরিচিত করেছিলেন, যাকে আমরা প্রভু বলে অনুবাদ করেছি (যাত্রা ৩:১৩-১৫)। আর নতুন নিয়মে আমরা দেখতে পাই, এই একই নাম, আমাদের
পরিত্রাতা যীশুর প্রতি প্রয়োগ করা হয়েছে (যোহন ৮:৫৮)। যীশুর শিষ্য থোমা যখন যীশুর প্রতি সেই মহান স্বীকারোক্তি করেছিলেন (যোহন
২০:২৮), তখন তিনি যীশুকে পুরাতন নিয়মের ঈশ্বর, তথা ইয়াওয়ে
বলেই স্বীকার করছিলেন, তিনি তাঁর থেকে কিছু কম ছিলেন না। যেহেতু যীশু ঈশ্বর বলতে
যা বোঝায়, সর্বোচ্চ অর্থে তা-ই ছিলেন, এবং একইসঙ্গে তিনি সত্য মানুষ ছিলেন, সেই
কারণে, থোমা এমন স্বীকারোক্তি করতে পেরেছিলেন, প্রভু (ইয়াওয়ে) আমার, ঈশ্বর
আমার! এখন, সেই পুত্র ঈশ্বর কীভাবে মানুষ হয়েছিলেন, তা আমরা পরবর্তী
অধ্যায়ে শিখব।